চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৯ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী। সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বিজয়ী ৫৫ জন কাউন্সিলরের একজনও নেই দলটির। বরং নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া অন্তত ১৫টি মামলায় আসামি হয়েছে দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মী। যারা ঘরছাড়া। এছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছে আড়াই শতাধিক। ভোটের দিন সংঘাতে আহত হয়েছে দলের কাউন্সিলর প্রার্থীসহ অর্ধশতাধিক কর্মী। অর্থাৎ দৃশ্যত চসিক নির্বাচন থেকে বিএনপির অর্জন কিছুই নেই। কিন্তু বিষয়টি মানতে নারাজ দলটির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির দাবি, ফলাফলে হারলেও ‘রাজনৈতিক বিজয়’ হয়েছে তাদের। বিএনপি নেতারা মনে করেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব’। সেটা তারা জনগণের সামনে আবারও উন্মোচন করার মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছেন। একইসঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে দীর্ঘ পথচলায় সাংগঠনিকভাবে দলকে গোছানোর সুযোগ হয়েছে। প্রচার-প্রচারণা, ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ এবং গণসংযোগকে ঘিরে ‘চাঙ্গা’ হয়েছে দলের কর্মীরা। মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় ছিল দলীয় কার্যালয়ে। ফলে প্রায় একমাস ধরে একটানা নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর ছিল নাসিমন ভবন। যা তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে।
এ বিষয়ে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নির্বাচন থেকে আমাদের দুটো অর্জন আছে। প্রথমত আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কখনোই যে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না সেটা আবারো বিশ্ববাসীকে আমরা জানাতে পেরেছি। যেমন ভোটের দিন সকাল থেকে যখন আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছিল এবং ভোট দিতে বাধা দেয়া হচ্ছিল তখন সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, বর্জন করবো কী না। তখন বলেছিলাম, আওয়ামী লীগের ভোট চুরির বিষয়টি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিব। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়িয়ে সেটা দেখাতে পেরেছি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এমনকি আওয়ামী লীগের মির্জা কাদেরও নির্বাচনের অনিয়মের কথা বলেছেন। এটাই আমাদের অর্জন।
বিএনপির এ মেয়র প্রার্থী বলেন, আমাদের দ্বিতীয় অর্জন হচ্ছে দীর্ঘ নির্বাচনী জার্নির মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করা। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম, প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা করে হেঁটে হেঁটে গণসংযোগ করেছি। এতে দলীয় কর্মীরা চাঙ্গা হয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে স্বতঃস্পূর্তভাবে নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছে।
‘চাঙ্গা হলে ভোটের দিন বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন দেখা যায় নি কেন?’ এমন প্রশ্নে ডা. শাহাদাত বলেন, নির্বাচন তো দলের সাথে হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে হয়েছে। আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে তখন কি করার থাকে? মন্ত্রী, এমপি, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা চট্টগ্রামে অবস্থান করে পরিকল্পনা করেছে আমাদের হারানোর এবং সেভাবে তারা কাজ করেছে। সেখানে কি করবো আমরা? তারপরও আমাদের কর্মীরা মাঠে ছিল। যদি না থাকতো তাহলে আমাদের শত শত কর্মী আহত হল কী ভাবে? আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থীরা আহত হয়েছেন কী ভাবে? মহিলা প্রার্থীকে গুলি করেছে, মহিলা এজেন্টকে গায়ে হাত দিয়ে বের করে দিয়েছে। এরপরও কি ভাবে বলবো মাঠে ছিল না।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম আজাদীকে বলেন, যেখানে ভোটই হয়নি সেখানেই পাওয়া না পাওয়ার হিসাব করছি না। তারপরও একটি বিষয় জনগণ দেখেছে, সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে চুরি করেছিল আওয়ামী লীগ। এবার দিনে চুরি করেছে। তারা যে সবসময় রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট চুরি করে সেটা জনগণের কাছে আবারও আমরা উন্মোচন করতে পেরেছি। এখানেই আমাদের রাজনৈতিক বিজয়।