বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা’ হিসেবে নাকচ করেছেন ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার মনতিৎস্কি। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বুঝি, এই নির্বাচনে আপনাদের জনগণের বাছাই–ই ছিল। কর্মকর্তারা বলেছেন, ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ এবার ভোট দিয়েছে। যাদের অধিকাংশ ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। রাশিয়া কী করেছে? আমরা কোনো দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না, বিশেষ করে বাংলাদেশের মত বন্ধুদেশে। এটা এক ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য বা মিথ্যা তথ্য। এগুলো বিশ্বাস করবেন না।’
গত ৭ জানুয়ারির ভোটে ২২৩টি আসনে জিতে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচন নিয়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের একাংশ সন্তোষ প্রকাশ করলেও ভোট ‘সুষ্ঠু হয়নি’ বলে বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। খবর বিডিনিউজের।
প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে চীন, ভারত ও রাশিয়া নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে; নতুন সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের প্রশংসা করেছে। নির্বাচন না গিয়ে আন্দোলনে থাকা বিরোধী দল বিএনপি নতুন সংসদের বিরুদ্ধে কালো পতাকা মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে শনিবার দলের একটি কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, এই দেশ আমাদের, এই দেশের সমস্যা আমাদের, এই দেশের সমস্যা সমাধান আমরাই করব। সে কারণে আজকে ভারত, চীন আর রাশিয়া তাদের সরকার হাসিনার সরকার, এটা বাংলাদেশের জনগণের সরকার না।’ বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন রাষ্ট্রদূত মনতিৎস্কি।
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম বৈঠকে রাজনীতি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা বলেন রাষ্ট্রদূত মনতিৎস্কি।
ডলার নির্ভরতা কমাতে রাশিয়ার সঙ্গে রুবল এবং টাকায় বাণিজ্যের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। রুবল বিনিময়ের বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূত আলোচনা করেছেন জানিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্যের বিষয়ে অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমরা কিছুটা শুরু করেছি। রুবলে বিনিময়ের ব্যাপারে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এটি যদি আমরা করতে পারি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে, তাহলে নির্দিষ্ট কোনো মুদ্রার ওপর আমাদের নির্ভরতা কমবে। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য অবশ্যই সহায়ক হবে।’
রাশিয়া ও বাংলাদেশের বিদ্যমান সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত করার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অত্যন্ত চমৎকার ও বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ার অর্থায়নে ও টেকনোলজিক্যাল সাপোর্টে আমরা নির্মাণ করেছি। খুব সহসা এটি উৎপাদনে যাচ্ছে। আমরা নিউক্লিয়ার নেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি তাদের সহায়তায়।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া তৈরি পোশাক, পাটসহ নানান পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশও রাশিয়া থেকে গম, সারসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে। দু’দেশের বাণিজ্য আরও সমপ্রসারিত করার বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত একটি এমওইউ সহসা স্বাক্ষরের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান হাছান মাহমুদ।