নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচনে যেতে হবে, এমন কোনো কথা সংবিধানে নেই। নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার শেষে ক্ষমতামসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দলের এই অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
গতকাল সকালের পালায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন মোট ১৩টি দলের প্রতিনিধি, যদিও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ২২টিকে। বিকালের পালায় বিএনপিসহ আরও ২২টি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে আগে নির্বাচন কমিশন যখন দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা করছে, তখন সংলাপ বর্জন করা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো রাজপথে। তারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৩ সালের মতোই হরতাল–অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ফিরে গেছে এবং কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
তাহলে বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন হচ্ছে? এই প্রশ্নে ফারুক খান বলেন, বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, সংবিধানের কোথাও এ কথা লেখা নেই। পৃথিবীর কোনো আইনেও লেখা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের সময় অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। সুতরাং যেসব রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা নেই, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণের প্রতি যাদের আস্থা নেই; তারা তো নির্বাচনে আসবেই না।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা হয় গ্রেপ্তার অথবা আত্মগোপনে, দলটির কেন্দ্রীয় ও গুলশানের কার্যালয় বন্ধ। এই অবস্থায় ইসির চিঠি গ্রহণ করার মতো বিএনপির অফিসে একজন লোকও পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমি তো মনে করি, এটা বিএনপির জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার। তারা অফিসে থাকবে না কেন? বিএনপি যে কর্মসূচি দিচ্ছে, এগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এসব সহিংসতামূলক কর্মসূচি।
জাতীয় নির্বাচনের আগ দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ হয়। এরপর হরতাল ও অবরোধের ডাক দেয় দলটি। এই কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবারও অবরোধ ডেকেছে বিএনপি।
বিএনপির এই কর্মসূচির বিষয়ে ফারুক খান বলেন, তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি সহিংসতাপূর্ণ। এটাকে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বলা যেতে পারে না। তারা সন্ত্রাসী দলের মতো কর্মসূচি দিচ্ছে। নির্বাচনের সময় যে কোনো রাজনৈতিক দল যদি অরাজকতা সৃষ্টি করে, তাহলে আইনশৃক্সখলা বাহিনী তাদের প্রতি ব্যবস্থা নিয়েছে এবং নেবে। ইসি নিজেই এটা জানে কখন কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে ব্যাপারে ইসি অবগত রয়েছে। ইতোমধ্যে ইসি এসব ব্যাপারে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে।
নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সরকার তাতে সহায়তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য সরকার থেকে ৮২টি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেগুলো ইসি বাস্তবায়ন করছে। এসবের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে ব্যালট পেপারের পেছনে সিল এবং স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নির্বাচন আরও অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কমিশন আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি আমাদের ব্রিফ করেছে। এর মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও নির্বাচনে অরাজকতা করে না। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোট প্রয়োগ করবে। যেসব রাজনৈতিক দল নাম সর্বস্ব, যাদের ভোটার নেই, তারাই কেবল এ ধরনের কথা বলতে পারে বলে আমরা মনে করি।