কুল বা বরই আমাদের দেশের বেশ প্রাচীন ফল। এ ফল আমাদের দেশের যত্রতত্র অবহেলায় অনাদরে হয়ে থাকে। টক মিষ্টি স্বাদের দিক থেকে যদিও ছোট বড় সবার পছন্দ। এটি আকৃতিগত দিক থেকে যদিও ছোট কিন্তু খাদ্যগুণে বেশ সমৃদ্ধ। বিশেষ করে গ্রামের শিশু কিশোরদের খুব পছন্দের ফল এটি। ফল পাকা অবস্থায় তাজা খাওয়া হয় এবং এর থেকে মুখরোচক আঁচার প্রস্তুত করা হয়। কুলগাছ মাঝারি আকারের বৃক্ষ, উচ্চতায় ৮–৯ মিটার হয়, ডালপালা নিম্নমুখী কাঁটায় পূর্ণ। গাছ বেশি পুরনো হলে কাঁটা প্রায় থাকে না। পাতা প্রায় ৬–৭ সে.মি. লম্বা এবং ৫ সে.মি. চওড়া হয়।
পাতার ওপরটা সবুজ পেছনের দিক কিছুটা সাদা। ছোট কুল মলিন সাদা হয়। কুলে ভিটামিন ‘সি’ শর্করা, আমিষ ও ক্যালসিয়াম আছে। প্রজাতি অনুসারে পাকা ফলের খাদ্যাংশযুক্ত শাঁসে থাকে ১৩.০.২০.২%, ১০০ ভাগ গ্রাম শাঁসে ভিটামিন ‘সি’র পরিমাণ ৭০.১৬ মি. গ্রা.। আমলকি ও পেয়ারার পরেই এর স্থান। কুলের অনেক জাত। বাংলাদেশেও নানাজাতের কুল জন্মে। অধিকাংশ জাতের কুল টক ও কষা। উন্নত জাতের কুলের সংখ্যা খুবই কম ।
রাজশাহীর নারকেলী এবং কুমিল্লার কচুয়া জাতের কুল বেশ সুস্বাদু । নারকেলী কুল দেখতে লম্বা এবং কচুয়া জাতে কুল গোল। রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে নারকেলী জাতের কুল জন্মে। তবে তাবৎ পৃথিবীর কুল দু’প্রকার যথা : ১. চীনা কুল ২. ভারতীয় কুল। চীনা কুল গাছে বসন্তকালে ফুল ধরে এবং শরৎকালে ফল ধরে। এ গাছ তীব্র শীত সহ্য করতে পারে। ভারতীয় কুল মাঝারি আকারের। শরতে ফুল ধরে এবং বসন্তের শুরুতে ফল পাকে। গাছ লাগানোর ৩/৪ বছরের মধ্যেই ফলন শুরু হয় । গাছ প্রায় ২৫–৩০ বছর পর্যন্ত ফল দেয় । ভাল গাছ থেকে বছরে প্রায় ১ কুইন্টাল ফল পাওয়া যায়। বড় ফলের গড় ওজন ২৫–৩০ গ্রাম। মিষ্টি কুল তাজা খাওয়া হয় । টক কুলের আচার ও জেলি তৈরি করা হয়।