আমাদের নিত্য পরিচিত একটি ফলের নাম পেঁপে। ওই উৎকৃষ্ট ফলটির রয়েছে আশ্চর্য ধরনের পুষ্টিগুণ। তাই প্রচলিত আছে দৈনিক একটি করে পেঁপে খাও বাড়ির বাইরে ডাক্তার তারাও । এতে ভিটামিন ‘এ’ যথেষ্ট পরিমাণে ‘বি’ ও ‘সি’ উপযুক্ত পরিমাণে এবং ‘ডি’ কিছু পরিমাণে বিদ্যমান। পেঁপের ঔষধিগুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না । হজমশক্তি বৃদ্ধি, লিভারকে সুস্থ সবল রাখা, রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধ পেঁপে ঔষধের কাজ করে। লম্বা, গোলাকার নানা আকৃতির পেঁপে হয়। কাঁচা পেঁপের রঙ সবুজ। পাকা পেঁপের রঙ সোনালি। দেখতে খুবই সুন্দর। ফলের ভেতরকার মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় কালো কালো বীজ হয় । পেঁপে কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কমলালেবু ও টমেটোর তুলনায় পাকা পেঁপেতে ভিটামিন ‘সি’ বেশি থাকে। পেঁপে থেকে প্রস্তুত হালুয়া ও পায়েস যেমন মুখরোচক তেমনি পেঁপের জ্যাম, জেলি মোরব্বাও সকলের প্রিয়। ‘পেঁপের উৎপত্তিস্থল হিসেবে মধ্য আমেরিকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ এ অঞ্চলেই পেঁপের বিভিন্ন প্রজাতি দেখা যায়। পেঁপে উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্রাজিল । ব্রাজিলে ১৭ লক্ষ টন পেঁপে উৎপন্ন হয় বছরে। এরপরে ভারতে ৩.৪ লক্ষ টন, ইন্দোনেশিয়ায় ৩.৪ লক্ষ টন, মেক্সিকোতে ৬.৪ লক্ষ টন, জায়ারে ১.৯ টন, ফিলিপাইনে ১.০ লক্ষ টন, পেরুতে ০.৫ লক্ষ টন, কলম্বিয়ায় ০.৫ লক্ষ টন, কিউবায় ০.৪ লক্ষ টন, মোজাম্বিকে ০.৪ লক্ষ টন, বাংলাদেশে ৩০ লক্ষ টন এবং ইকুয়েডরে ০.৩১ লক্ষ টন। বাংলাদেশের পাবনা, ফরিদপুর, যশোর, ঢাকা, খুলনা, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে পেঁপে ভাল উৎপন্ন হয়। পেঁপে গাছ অবৃক্ষ জাতীয় ফলগাছ। এ গাছ নরম কাণ্ড বিশিষ্ট, সাধারণ শাখাবিহীন, গাছের মূলকাণ্ড মুকুটের মতো দীর্ঘ। বৃত্তমূলের কাছে একক অথবা গুচ্ছাকারে ফল ধরে। পেঁপে গাছ ৪–৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর জীবনকাল সাধারণতঃ ৪ বৎসর। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অনেক বেশি বৎসর পর্যন্ত জীবিত থাকে । পেঁপে গাছে সাধারণত তিন ধরনের ফুল আসে। স্ত্রী, পুরুষ, উভয় লিঙ্গ ফুল। স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গ ফুলেই ফল ধরে। গ্রামাঞ্চলে অনেকেই ঘরের পাশে এক ধরনের পেঁপে গাছ লাগিয়ে থাকে যা বেশ লম্বা হয় এবং অনেকদিন ফল দেয়। এছাড়াও ছোট প্রজাতির অধিক ফলনশীল পেঁপের চাষ করা হয়। প্রতি ১০০ ভাগ পেঁপের মধ্যে ০.৫ ভাগ প্রোটিন, ৯.৫ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ০.১ ভাগ সহজপাচ্য ফ্যাট,
০.৪ ভাগ খনিজ পদার্থ, ০.০১ ভাগ ক্যালসিয়াম, ০.০১ ভাগ ফসফরাস, ০.৪ ভাগ লৌহ ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘বি’ ও সি। প্রতি ১ কেজি পেঁপেতে ৪০০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় পেঁপে বিভিন্ন জাতের দেখা যায়। তার মধ্যে শাহী পেঁপে, থাই পেঁপে, সোলো রাঁচী, ওয়াশিংটন, ব্লুসেম ও হানিডিউ অন্যতম। পেঁপে গাছে প্রথম অবস্থায় একই সঙ্গে অনেক ফল ধরে। সব ফল খুব কাছাকাছি থাকায় ঠিকমতো বাড়তে পারে না। সেজন্য মাঝে মাঝে কিছু ফল তুলে হাল্কা করে দিতে হয়। পেঁপে গাছে সাধারনতঃ ৫–৬ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৯–১০ মাসের মধ্যে । উন্নতজাতের পেঁপে গাছ থেকে প্রতিবছর ৩৫–৪০ কেজি ফল পাওয়া যায়। কাঁচা পেঁপে থেকে মোরব্বা, চাটনি প্রভৃতি খাদ্য তৈরি করা যায়। পেঁপের ইংরেজি নাম Papaya ও বৈজ্ঞানিক নাম Carica Papaya Linn.