পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে নাড়ির টানে শহর ছাড়ছে মানুষ। কোলাহলমুখর চট্টগ্রাম নগরী ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরবে আগামীকাল সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তাই বাংলাদেশে আগামী মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে ছিল ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। যারা শুক্রবার বাড়ি যাওয়ার টিকিট পাননি তারা গতকাল বাড়ির পথে ছুটেছেন। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় তীব্র গরম উপেক্ষা করে বাস–ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে মানুষ ছুটে গেছেন আপন গন্তব্যে। করোনার কারণে দুই বছর ঈদে অনেকের বাড়ি ফেরা হয়নি। এবার অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তাই স্বজনদের সঙ্গে বাড়িতে স্বস্তিতে ঈদ করার আনন্দে ছুটছেন সবাই। পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ করার জন্য প্রতি বছর বাস ও ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার পথে নানা ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ঈদের এক–দুদিন আগ থেকে প্রতিটি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। বাসে ভোগান্তি থাকে আরো বেশি। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। এবার ট্রেনে ঈদযাত্রার ৫ দিনের মধ্যে শুধুমাত্র গত তিন দিন ময়মনসিংহগামী বিজয় এঙপ্রেস ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ছিল। আর গত শুক্রবার চাঁদপুরগামী মেঘনা স্পেশাল–১ ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। চট্টগ্রাম থেকে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন, ৪টি মেইল ট্রেন এবং ২টি স্পেশাল ট্রেনের কোনো ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়নি।
প্রতিদিনের মতো গতকালও ট্রেনের ঈদযাত্রায় সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ১৬টি ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে গেছে। ১৬টি ট্রেনের মধ্যে গতকাল ময়মনসিংহগামী বিজয় এঙপ্রেস ৩০ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে গেছে। অন্যান্য ট্রেন যথাসময়ে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে গেছে বলে জানান চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, অন্যান্য সব ট্রেনে যাত্রী ভর্তি থাকলেও সকালে সুবর্ণ এঙপ্রেস ট্রেনে ১৫০ আসনের মতো ফাঁকা ছিল। ছাদে কোনো যাত্রী উঠতে দিইনি।
এদিকে কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, কদমতলী বাস টার্মিনাল, স্টেশন রোড বিআরটিসি বাসস্টেশন রোড, গরিবুল্লাহ মাজার গেট, অলংকার মোড়, একে খান ও সিটি গেট এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট যারা কেটেছেন তারা এবং যারা স্ট্যান্ডিং টিকিট পেয়েছেন তাদের ভ্রমণ কিছুটা আনন্দদায়ক হলেও বাসের যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল বেশি। বাসে দূরপাল্লার যাত্রীদের সহজে মিলছে না টিকেট।
টিকেট পাওয়া গেলেও বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবুও দুর্ভোগ মাড়িয়ে সবাই ফিরছেন গ্রামে। অনেক ট্রেনের ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠে গেলে জিআরপি পুলিশ এবং আরএনবির সদস্যরা যাত্রীদের ট্রেনের ছাদ থেকে নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী আজাদীকে জানান, ঈদে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য জিআরপি পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ না করার জন্য যাত্রীদের সতর্ক করা হচ্ছে। ঈদযাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতে কেউ ছাদে ভ্রমণ করতে না পারে এজন্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্টেশনে জিআরপি পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
এদিকে বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতেও দেখা গেছে, যারা আগে টিকেটে পাননি তারা টিকেটের জন্য এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন। যাত্রীরা কাউন্টারে গিয়ে যে রুটের টিকেট চাচ্ছেন তা মিলছে না। যেসব কাউন্টারে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট দামের চেয়ে ৩ থেকে ৪শ টাকা, অনেক ক্ষেত্রে ৫–৬শ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ট্রেনের চেয়েও দূরপাল্লার বাসযাত্রীদের এবার ভোগান্তি বেশি।