রাঙ্গুনিয়ায় চলছে বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার মহাযজ্ঞ। প্রতি ধান কাটার মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে ধান মাড়াই ও ধান-খড় শুকানো হয়। প্রায় এক থেকে দেড় মাস ধরে চলে এই কার্যক্রম। এতে সড়ক ছোট হয়ে যানবাহনগুলো সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করছে। ফলে ধান কাটার মৌসুমে দুর্ঘটনার আশংকা বাড়ছে এসব সড়কে। সর্বশেষ গত বুধবার কাপ্তাই সড়কের হাবিবের গোট্টা এলাকায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মোজাম্মেল নামে এক যুবক। এছাড়া ধানের খড়কুটোর কারণে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন পথচারীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের মরিয়মনগর চৌমুহনী থেকে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান পর্যন্ত চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত গুমাই বিলের অবস্থান। বিশাল গুমাই বিল থেকে ধান কেটে এনে সড়কের দুই পাশেই মাড়াইয়ের কাজ সেরে নিচ্ছেন কৃষকরা। সড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে কাটা ধানের স্তূপ। পাশেই ওইসব ধান ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র দিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। এতে বাতাসে উড়ছে খড়ের টুকরো আর ধূলাবালি, যা গিয়ে পড়ছে পথচারী আর ছোট যানের যাত্রীদের চোখে-মুখে। এদিকে মাড়াই পরবর্তী ওইসব ধান আর খড় সড়কের ওপরেই শুকানো হচ্ছে। ফলে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দখল হয়ে গেছে। এতে যান চলাচল করছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। কাপ্তাই সড়ক ছাড়াও মরিয়ম নগর-গাবতল সড়ক, ঘাটচেক-রানির হাট সড়কেও কৃষকেরা ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন। এ পরিস্থিতি উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় সড়কেই বিরাজ করছে।
মরিয়ম নগরের ব্যবসায়ী ফজলুল হক জানান, গতকাল সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটি খড়ের টুকরো চোখে এসে পড়ে। এতে চোখের ক্ষতি হয়। চিকিৎসকের শরণাপন্নও হতে হয়েছে।
চন্দ্রঘোনা গণবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। রাস্তায় খড় বিছানো থাকার কারণে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া ধানের খড়কুটো উড়ে এসে পড়ে চোখে। চাকা পিছলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। ভারি যানবাহন চলার সময় এক পাশ বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওভারটেকের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
কাটাখালীর কৃষক আলী আকবর জানান, তার বাড়ি জমি থেকে অনেক দূরে। ধান মাড়াইয়ের মেশিনের মালিকও রাস্তা ছেড়ে মেশিন নিয়ে ওদিকে যেতে চান না। তাই নিরুপায় হয়েই সড়কে ধান মাড়াইয়ের কাজ করতে হচ্ছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়ির উঠান ছোট। সেখানে মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করা যায় না। এ বছর ধান কাটা শ্রমিক না পাওয়ায় মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে হচ্ছে। শ্রমিক-সংকটের কারণে কৃষকদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহর অনেক মেহেরবানি এ বছর বৃষ্টি আমাদের ঝামেলা করেনি।
ধান কারবারি আহমদ হোসেন বলেন, বাড়িতে বড় উঠান নেই। ফলে জমির পাশের এই সড়কটি ব্যবহার করা হয়। সড়কটি পাকা এবং পিচঢালা হওয়ায় নতুন করে ধানের খোলা তৈরির ঝামেলা করতে হয় না। এসব কারণে কৃষকেরা একেবারে সবকিছু এখানে সেরে তারপর বাড়ির পথ ধরেন।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্ম পরিদর্শক রাসেল দেওয়ান বলেন, সড়ক দখলে নিয়ে এসব কার্যক্রম বেআইনি হলেও এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। নিষেধ করলেও কেউ মানে না। তিনি বলেন, গত বুধবার বিকেলে পরিবার নিয়ে আসার সময় কাপ্তাই সড়কের কাটাখালী এলাকায় শুকানোর জন্য রাস্তায় বিছানো ধানে মোটরসাইকেল পিছলে পড়ে আমি নিজেই দুর্ঘটনায় পড়েছি।