বাড়তি দামে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি

এখনো অস্থির বাজার

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

আপাতত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে না-সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্ধান্ত দেয়া হলেও বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বেশি দামে সয়াবিন বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণ দেখিয়ে তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বোতলজাত সয়াবিন ছাড়াও পাইকারীতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। এছাড়া পাম তেলের অবস্থাও একই। খাতুনগঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে যে হারে তেলের দাম বেড়েছে আমাদের দেশে ঠিক সেভাবে প্রভাব পড়েনি। গতকাল নগরীর কাজীর দেউড়ির কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কয়েকটি বোতলজাত সয়াবিন তেলের কোম্পানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। তারা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সেভাবে অর্ডারও নেন। খুচরা বিক্রেতা মিজানুর রহমান জানান, আমরা এখনো আগের দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছি। তবে কয়েকটির দাম বাড়ানো হবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।
শরীফুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা জানান, গত এক বছর আগে সয়াবিন তেলের লিটার ছিল ১০৫ টাকা। সেটি এখন করা হয়েছে ১৬০ টাকা। এখন আবার সরকারের কাছে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীরা। আমরা সাধারণ ক্রেতাদের তো কিছু করার নাই। আমরা বরাবরের মতোই ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। হয় বেশি দামে কিনতে হবে, না হয় সয়াবিন ছাড়া রান্না করে খেতে হবে। সরকার দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ার পরেও বিভিন্ন দোকানে অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে শুনেছি। সরকারকে অবশ্যই এদিকে নজর দিতে হবে।
অন্যদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাস আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ টাকায়। বর্তমানে ১৮০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ১৩০ টাকায়। অন্যদিকে একই সময়ে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫ হাজার ৩১০ টাকায়, বর্তমানে মণপ্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫৬০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায় ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে উঠে। এই সুযোগে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী জাহানারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আবু বক্কর দৈনিক আজাদীকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজার বাড়তি। ফলে ধাপে ধাপে বেড়েছে তেলের বাজার। বর্তমানে বাজার উঠানামার মধ্যে আছে। আমরা যতটুকু জেনেছি, তেলের উৎপাদন প্রত্যাশামত হয়নি। বিশেষ করে আমাদের দেশে পাম তেল আসে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে। সেসব দেশে করোনার কাছে উৎপাদন ভালো হয়নি। তবে একটি বিষয় গত এক মাসে মালয়েশিয়াতে পাম তেলের আন্তর্জাতিক বাজার বেড়েছে এক হাজার রিংগিত। সেই হিসেবে আমাদের এখানে দাম বাড়ার কথা মণে ৫০০ টাকা। কিন্তু এখানে ২০০ টাকাও বাড়েনি। অপরদিকে আমরা জানতে পেরেছি ব্রাজিলে সয়াবিনে উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি। সেখানখার রপ্তানিকারকদের নাকি তাদের সরকার বলেছে, রপ্তানি করতে সরকারের অনুমতি লাগবে। যা আগে কখনো ছিল না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে মাঝারি ভূমিকম্প
পরবর্তী নিবন্ধ১৫ থানায় ১৫ সাংগঠনিক তদারকি কমিটি