বাজার সিন্ডিকেট, অসাধু ব্যবসায়ী এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে বেড়ে যাওয়া দ্রব্যের মূল্য এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। বলতে গেলে বাজার এখনও অস্থিতিশীলই রয়ে গেছে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানী তেলের সমস্যা আমাদেরকে বেশ ভোগাচ্ছে, এতে করে জ্বালানী তেল নির্ভর বিদ্যুৎ প্ল্যাটগুলোতে ভুতর্কি দিতে হচ্ছে এবং ওসব প্ল্যান্টগুলো থেকে বিদ্যুৎও কম উৎপাদিত হচ্ছে।
এমতাবস্থায় বিশ্বসম্প্রদায় রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাবার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বাজারে দ্রব্যসমূহের মূল্য আদৌ কমবে কীনা তা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর যদি যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে পৃথিবীর বেশকিছু দেশে এর মারাত্বক প্রভাব পড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যুদ্ধ ইতিমধ্যে পৃথিবীর দেশে দেশে যে প্রভাব ফেলেছে তাতে করে অনেক দেশই তাদের দেশের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও বেশ শক্ত ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকলেও বিভিন্ন জিনিষপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের গরীব এবং মধ্যবিত্তরা রয়েছে বেশ বিপাকে।
করোনাকালীন কাজের অভাবে বেশকিছু গরীব এবং মধ্যবিত্তের মানুষ, শহরে ছেড়ে গ্রামে পাড়ি দিয়েছিল করোনা স্থিতিশীল হওয়ার পর তাদের অনেকেই শহরে ফিরে আসলেও বর্তমান বাজারদর দেখে তারা পুনঃরায় গ্রামে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করছে। মুলতঃ এরা গ্রামে ফিরে যেতে চাইছে এ কারণে যে, এই পরিস্থিতিতে অন্ততপক্ষে বাসা ভাড়াটা বাঁচাতে পারলে তাদের জীবন যাপনের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে। তাছাড়া শহরে তো সবকিছুই কিনেই খেতে হয় গ্রামে হলে অন্ততঃপক্ষে বাড়ির ওঠোনে কিছু সবজি কিছু ফলমূল লাগিয়ে খাওয়া যাবে তাতেও কিছু টাকা বাঁচবে। প্রকৃতপক্ষে এদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অর্থনৈতিক টানাপোড়ন সবসময় ছিল যা ভেতর থেকে কেউ লক্ষ্য করেনি।
কমকম খেয়ে জীবনযাপন করা এসব জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন সহজেই অভাব অনটনের কথা কাউকে ঘটা করে বলতে পারেন না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে মধ্যবিত্তদের কথা কেউভাবে না।
সারা বছর দু’টা শার্ট এবং পেন্টকে সপ্তাহে দু’বার করে নিজে অথবা পরিবারের হাতে ধুঁয়ে পরিষ্কার করে পড়া মধ্যবিত্তরা দেখতে পরিষ্কার এবং গোছানো মনে হলেও মনের মধ্যে যে কত কষ্ট পোষে রাখে তা কেউ বুঝতে পারে না। সন্তানদের লেখাপড়ায় যথাযথ অর্থনৈতিক সার্পোট দিতে না পারা, পিতা–মাতার ওষুধসহ স্ত্রীর কোনো আবদার রক্ষা করতে না পারা মধ্যবিত্তদের জীবন এখন আরো দুর্বিষহ হয়ে ওঠছে শুধুমাত্র বাজারে সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে। মধ্যবিত্তদের এহেন অর্থনৈতিক টানাপোড়ন কবে শেষ হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণ যদি অসাধু ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেট হয় তাহলে যথাযত কর্তৃপক্ষের উচিত নয়কি তাদের থামানো? আর যদি এর কারণ যুদ্ধ হয় তাহলে বিশ্বসম্প্রদায়ের উচিত অচিরেই যুদ্ধ থামানোর ব্যবস্থা করা।
কারণ শুধু মাত্র দু’টা দেশের মধ্যে যুদ্ধের কারণে পুরো পৃথিবীর মানুষ কষ্ট পাক এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রত্যাশা করবো যথাযথ কর্তৃপক্ষ বাজারে দ্রব্য সমূহের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কঠোর পন্থা অবলম্বন করবেন এবং দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তদের অর্থনৈতিক টানাপোড়ন বিষয় খোঁজখবর রাখার মাধ্যমে একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাবেন।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক