জন্মই যেন তাদের আজন্ম পাপ। মৃত্যুর পরও সেই পাপের বোঝা কমে না। নাম-পরিচয় থাকার পরও তাদের দাফন হয় বেওয়ারিশ হিসেবে। চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিদিন নদী, খাল, নালা, রাস্তার পাশে নির্জন স্থানে মিলছে বেওয়ারিশ লাশ। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা যাচ্ছে অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকজন। পুলিশ কেস হয়নি এমন ক্ষেত্রে পরিচয় বের করতে না পারলে বা কোনো স্বজনের সন্ধান না মিললে সেটি বিবেচিত হয় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে। পুলিশি তদন্তে হাতেগোনা কয়েকটি লাশের পরিচয় শনাক্ত হলেও অধিকাংশ লাশের পরিচয় মিলে না। কারণ লাশ শনাক্তে পুলিশের কোনো উন্নত প্রযুক্তি নেই। এখনো সনাতন পদ্ধতিতে লাশের বিবরণ লিখে রাখার (সুরতহাল রিপোর্ট) মধ্য দিয়ে বেওয়ারিশ লাশের পরিচয় শনাক্তকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করছে পুলিশ। যার কারণে এসব মানুষের লাশ শেষ পর্যন্ত বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সহায়তায়। গত ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম শাখা বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে ২৫৮টি। গত বছর দাফন করেছে ২৮৪টি লাশ। বেওয়ারিশ লাশ দাফনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিও বিপাকে পড়েছে।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম সম্পাদক আশিক এলাহী আজাদীকে বলেন, লাশ দাফনের পর কবরের উপর একটি নম্বর টাঙানো হয়। নম্বরটি এক মাস থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণে থাকে। এর মধ্যে কারও পরিচয় শনাক্ত হলে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়। তবে দাফনের পর খুব কম লাশেরই পরিচয় শনাক্ত হয়ে থাকে। তিনি বলেন, লাশ শনাক্ত করা থানা পুলিশের কাজ।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন) সোহেল রানা জানান, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার সুরতহাল, ময়নাতদন্ত, জিডি, মামলা সবকিছু হয় সংশ্লিষ্ট থানায়। এর একটা কপি দেওয়া হয় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে। এছাড়া দেশের সব থানায় এই বিবরণ বা প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, একটা বেওয়ারিশ লাশ পাওয়ার পর তার পরিচয় বের করার জন্য ময়নাতদন্ত হয়, পরিচয় জানার জন্য থাম্প ইমেপ্রশন থেকে এনআইডির সাথে মেলানোর চেষ্টা করি। প্রাথমিকভাবে যদি পরিচয় পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে ডিএনএ নমুনা নিয়ে সিআইডিকে পাঠানো হয়। এছাড়া মামলা হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
পুলিশ বলছে, এভাবে তারা একটি মরদেহ শনাক্তের জন্য তিন মাস তদন্ত করতে থাকে। এর ফলে সন্তোষজনক সংখ্যক মরদেহ শনাক্ত করা গেছে বলে দাবি তাদের। তবে সেই সংখ্যাটি দিতে পারেনি।
আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম সম্পাদক আশিক এলাহী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। কোনো লাশের সংবাদ আমাদের কাছে এলে আমরা পুলিশকে অবহিত করি। আইনি প্রক্রিয়া সম্পাদন শেষে যথাযথ সম্মানের সাথে সেই লাশ দাফনের ব্যবস্থা করি। ২২ মহল্লা কবরস্থানের একটি অংশ বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, লাশের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে, সেই জায়গাটুকুতে সংকুলান হচ্ছে না। সরকারের কাছে আকুল আবেদন থাকবে, আমাদের একটি নিজস্ব জায়গা দেওয়া হোক, যেখানে আমরা বেওয়ারিশ লাশগুলো দাফন করতে পারব।
চলতি বছরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, নগরী ও জেলায় বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এসব লাশের মধ্যে নাম-পরিচয় জানা গেছে এমন লাশের সংখ্যা হাতেগোনা।