বাড়ইপাড়ার নতুন খাল খননেই সমাধান

নগরীর জলাবদ্ধতা ।। চাক্তাই খালের ওপর পানির চাপ কমানো ও শহরের ময়লা আবর্জনার ব্যবস্থাপনা জরুরি

হাসান আকবর | সোমবার , ৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। এক হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ের দুই কিলোমিটারের সামান্য বেশি দৈর্ঘ্যের এই নতুন খাল খনন না করা পর্যন্ত শহরের বিস্তৃত এলাকার জলাবদ্ধতার সুরাহা হবে না। অপরদিকে চাক্তাই খাল শহরের পানি নিষ্কাশনের ধারণক্ষমতা হারিয়েছে। খননের মাত্র এক মাসের মধ্যেই এই খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলছে, নতুন খাল খনন না করে শহরের লালখান বাজার থেকে চান্দগাঁও পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নতুন খাল খননের প্রকল্পটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন নগরপরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানিয়েছে, নগরীর লালখান বাজার থেকে ওয়াসা মোড় হয়ে ষোলশহর দুই নম্বর গেটসহ চান্দগাঁও এলাকার পানি বিভিন্ন নালা ও উপখাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে মূলতঃ চাক্তাই খাল হয়ে। কিন্তু চাক্তাই খালের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে উঠেছে দীর্ঘদিনের নানামুখী অত্যাচারে। শহরের অন্যতম প্রধান খাল হিসেবে পরিচিত চাক্তাই খাল আগেকার জৌলুশ হারিয়েছে। দখলে দখলে খাল ছোট হয়ে গেছে। এই খাল যেন নিয়মিত ভরাটের কার্যক্রম চলে। শহরের ময়লা আবর্জনার একটি অংশ এই খালে গিয়ে পড়ছে। ফলে প্রতিবছরই জলাবদ্ধতা ভয়াল রূপ নিচ্ছে। শহরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ষোলশহর দুই নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত এলাকার পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পাঠানোর জন্য নতুন একটি খাল খননের কর্মসূচি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। নগরীর বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত এই খালটি খননের কথা প্রথম বলা হয় ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে। নতুন খালটি বাড়ইপাড়ার চাক্তাই খালের অংশ থেকে শুরু করে বলিরহাট হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মেশার কথা। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি খননের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ২০০৫ সালের দিকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং যাছাই বাছাই শেষে ৩২৬ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৪ জুন নতুন খাল খননের প্রকল্পটি একনেকে পাশ হয়। ২০১৭ সালের জুনে এই খালটির খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটির জন্য সর্বমোট ২৫ দশমিক ২৬ একর জমি অধিগ্রহণ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কিছুই হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি নিয়ে আবারো আলোচনা হয় এবং সংশোধন করে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও কাজ না হওয়ায় গত বছরের জুন মাসে আবারো প্রকল্পটি সংশোধন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ৩২৬ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় সাত বছরের ব্যবধানে এসে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনকয়েক আগে তড়িঘড়ি করে নতুন খাল খননের প্রকল্পটি উদ্বোধনও করেন। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় ২৫ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার ৯১৪ কোটি টাকা সিটি কর্পোরেশনকে প্রদানও করেছে। সিটি কর্পোরেশন এই অর্থ ভূমি হুকুম দখলের জন্য জেলা প্রশাসনের নিকট জমা দিয়েছে। নতুন এই খালটি খনন করা হলে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট থেকে শুরু করে মুরাদপুর, শুলকবহর, বাড়ইপাড়া, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, বাকলিয়া ও চাক্তাই এলাকায় জলাবদ্ধতা বহুলাংশে কমে যাবে বলেও বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো মন্তব্য করে। কিন্তু প্রকল্পটির কাজ শুরু না হওয়ায় জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা কেবলই বাড়ছে।

বিদ্যমান চাক্তাই খাল দিয়ে শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সামাল দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে একাধিক বিশেষজ্ঞ দৈনিক আজাদীকে বলেছেন, চাক্তাই খালের উপর পানির চাপ কমাতে হবে। আর নতুন খাল খনন ছাড়া এই চাপ কমানো সম্ভব নয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, বাড়ইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটি ঝুলে না থাকলে বেশ সুফল পাওয়া যেতো। তবে সবকিছুর আগে শহরের ময়লা আবর্জনার ব্যবস্থাপনা জরুরি বলে মন্তব্য করে তারা বলেছেন, শহরের খাল এবং নালা প্রতিদিনই ভরাট হচ্ছে ময়লা আবর্জনায়। এভাবে ময়লা আবর্জনায় খাল নালা ভরাট হলে নতুন খাল খনন করেও খুব বেশি সুফল মিলবে না বলেও একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, সমন্বয়ের অভাব প্রকট। এই অভাবই শহরকে ডুবাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএ দুইটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের। তাই এখানে বসে সমন্বয় হচ্ছে না। যে কোনও প্রকল্প গ্রহণের আগে একটি সুষ্ঠু সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নগরীর খাল নালা সবই ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পুরোটা বাস্তবায়ন হয়নি। আপস্ট্রিমে ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু ডাউন স্ট্রিমে কাজ শেষ হয়নি। ফলে উপর থেকে পানি নামতে পারছে না। সবকিছু মিলে সমন্বয়হীনতা প্রকট হয়ে ওঠায় নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে বলেও স্থপতি আশিক ইমরান মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশপথ নিলেন মহিউদ্দিন বাচ্চু
পরবর্তী নিবন্ধআর ভারপ্রাপ্ত নন, সভাপতি হলেন মাহতাব ও মোতাহের