জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য আলোচনা ও সিদ্ধান্ত বহির্ভূত বিষয় সংযুক্ত করে সুপারিশ জমা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সুপারিশ জমা দেওয়ার জন্য ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ক্ষোভ ও হতাশার কথাও বলেছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এদিন বিকালে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অবশেষে তাদের কাজের সমাপ্তি টেনেছেন। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। দ্বিতীয়বার ধন্যবাদ দিচ্ছি এজন্য যে, তারা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। যে জুলাই জাতীয় সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছি, সেটার বহির্ভূত অনেক কিছু সেখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। চার–পাঁচ দিন আলোচনা হয়েছে। যাহা আলোচনা করিলাম, তাহা এখানে নাই। সুপারিশ যা দেওয়ার দিয়েছে, আমার মনে হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যই এসব সুপারিশ দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত করা হয়নি দাবি করে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের ৮৪টি দফার মধ্যে অনেকগুলোতে বিভিন্ন দলের ভিন্নমত রয়েছে। নোট অব ডিসেন্টগুলো বিস্ময়করভাবে আজকের সংযুক্তিতে উল্লেখ নেই। সুপারিশে থাকা সংবিধান সংস্কার পরিষদের ধারণা নিয়েও কোনো বৈঠকে আলাপ বা সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ নামে নতুন একটি ধারণা এখানে যুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের টেবিলে এটা কখনো আলোচিত হয়নি। আসন্ন নির্বাচনটা হবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। সেই সংসদ সদস্যরা যদি সংবিধান সংস্কারের কার্যক্রম পরিচালনা করে সেটা তো জাতীয় সংসদেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় সংসদ কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত হয়নি। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত উনারা আরোপ করতে পারেন না।
বর্তমানে গণভোট আয়োজনের সাংবিধানিক পথ না থাকার কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার কথা। সংবিধান সংস্কারের কথা না। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ম্যান্ডেট হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজন। হ্যাঁ, জুলাই জাতীয় সনদ গণভোটের মাধ্যমে যদি জনগণের ম্যান্ডেট পায় তাহলে সে অনুযায়ী সংবিধান পরিষদ গঠন হতে পারে। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদ গণভোটে যাবে যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে সেভাবে।
সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে পিআরের সংখ্যানুপাতের (পিআর) বিষয়টিও ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদে আসেনি দাবি করে তিনি বলেন, এখানে বলা হয়েছে, নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতিক হারে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। এই রকম কিছু তো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। এখানে পিআরের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলে দিয়ে তারা নাকি এটা গণভোটে পাঠাবে। এভাবে তো সিদ্ধান্ত হয়নি। আরো একটি আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তারা ২৭০ দিন সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো গৃহীত না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে সংযুক্ত হবে। এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। অটোপাসের মতো কোনো বিষয় সংবিধানে থাকতে পারে না। এগুলো কীভাবে সুপারিশে এলো আমি জানি না।












