নগরের চকবাজার কাপাসগোলার বাসা থেকে গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ভাত খেয়ে বের হয় কলেজছাত্র মো. শাকিল খান (১৯)। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলেও বাসায় না ফেরায় তার মোবাইলে কল দেন বাবা মো. আবুল কাশেম। কিন্তু মোবাইল বন্ধ পান। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান পাননি তিনি। সর্বশেষ গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে কালুরঘাট এলাকার পরিচিত এক মহিলার কাছ থেকে খবর পান, তার ছেলের মরদেহ পড়ে আছে। পরে লাশ পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসার খবর পেয়ে ছুটে যান চান্দগাঁও থানায়।
পুলিশ আজাদীকে জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালুরঘাট ইস্পাহানি জেটিতে অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পরে শাকিলের বাবা এসে জানান, এটা তার ছেলের লাশ। শাকিলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে চোখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাই হত্যাকাণ্ড নাকি অন্যকিছু তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে। নিহত শাকিল কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মো. সিটি কর্পোরেশন কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। তার ছোট ভাই আবু সোবহান (৬) একটি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার। গত আট মাস ধরে চকবাজার কাপাসগোলা এলাকায় বাবা–মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে সে। এর আগে দীর্ঘদিন তারা কালুরঘাট এলাকায় ছিল। তার বাবা আবুল কাশেমের চকবাজার বড় গ্যারেজ এলাকায় ভ্যানগাড়ি মেরামতের একটি গ্যারেজ রয়েছে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমরা খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় শাকিলের লাশ উদ্ধার করি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। চোখে গর্ত ছিল, যা অনেকটা কোনো পোকামাকড়ে খেয়ে ফেলার মতো। তবে সেটা নিশ্চিত না। পোস্টমর্টেমের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়। কাল (আজ) রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
ওসি জানান, যেখানে লাশটি পাওয়া গেছে সেখানে জোয়ারের পানি ওঠে। লাশটি উদ্ধারের সময় পানি ছিল না। তবে কর্দমাক্ত ছিল।
এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র আজাদীকে জানায়, সোমবার বিকালে মোবাইল নিয়ে শাকিল ও তার বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। রাত ৩টায় মারামারি হয়। সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
শাকিলের বাবা আবুল কাশেম আজাদীকে বলেন, কালুরঘাটে ২৫ বছর ধরে ছিলাম। শাকিলের জন্মও সেখানে। ওখান থেকে আট মাস আগে চলে আসি। কিন্ত সেখানে বন্ধু–বান্ধব থাকায় মাঝেমধ্যে শাকিল সেখানে আড্ডা দিতে যেত। না যেতে তাকে অনেকবার মানা করেছি। শুনত না।
তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে ভাত খাওয়ার পর সে বাসা থেকে বের হয়। রাতেও না আসায় অনেক খুঁজেছি। তার মোবাইল বন্ধ পাই। দুপুর আড়াই–তিনটার দিকে কালুরঘাট থেকে পরিচিত মহিলা ফোন করে জানায় আমার ছেলের লাশ নিয়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরপর চান্দগাঁও থানায় ছুটে আসি।
তিনি জানান, ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। তাই অভাব–অনটনের মধ্যেও ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। কয়েকদিন আগেও ছেলের টিউশন ফি’সহ অন্যান্য খাতে ফি হিসেবে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়েছেন ধার করে। ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে গেছে স্বপ্ন, সাথে ভেঙে পড়েছেন তিনি। কথা বলতে বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। বলেন, আমার তো সব শেষ।