নগরজুড়ে গ্যাসের হাহাকার চলছে। রান্নাঘরের চুলা থেকে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ সর্বত্রই ‘নেই নেই’ রব উঠেছে। গভীর রাত অব্দি মিলছে না গ্যাস। মহেশখালীস্থ এলএনজি টার্মিনালে সংস্কার কাজ চালানোর ফলে চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান এক তৃতীয়াংশের বেশি কমে গেছে। চাহিদা এবং যোগানের বিস্তর ফারাকের কবলে পড়ে চট্টগ্রামের শিল্প, বিদ্যুৎ, বাসা–বাড়িসহ সর্বত্রই গ্যাস সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টর বর্তমানে পুরোপুরি আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি পর্যাপ্ত থাকলেই কেবল চট্টগ্রামে গ্যাসের স্বাভাবিক যোগান থাকে। এলএনজি সরবরাহ না থাকলে চট্টগ্রামে গ্যাস থাকার সুযোগ নেই। গত কিছুদিন ধরে মহেশখালী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে দৈনিক প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল। এরমধ্যে চট্টগ্রামের জন্য ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস রেখে বাকি গ্যাস পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকা অঞ্চলে। কিন্তু মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালে থাকা দুইটি এলএনজিবাহী জাহাজের (এফএসআরইউ) একটিতে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম শুরু করায় এলএনজির যোগান কমে যায়। বর্তমানে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের স্থলে ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো এলএনজি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় চট্টগ্রামের বরাদ্দ। ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের স্থলে দেয়া হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের প্রবাহ কমে যাওয়ায় লাইনে কমেছে গ্যাসের চাপও। ফলে রান্নাঘরের চুলা থেকে শিল্প কারখানা পর্যন্ত সর্বত্রই দেখা দিয়েছে গ্যাসের অভাব। রান্না ঘরের চুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন ধরেছে গাড়ির। শহর এবং গ্রামাঞ্চলের প্রায় সব সিএনজি স্টেশনেই গ্যাস বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
নগরজুড়ে গ্যাসের হাহাকারের মাঝে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) সাথে যোগাযোগ করে কাফকো এবং সিইউএফএলসহ বড় ইউনিটগুলোতে সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে অন্যান্য খাতগুলো স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু এতেও খুব বেশি সুফল মিলেনি। গতকালও দিনভর নগরীতে গ্যাসের সংকট ছিল। সিএনজি স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে গাড়ির। রান্নাঘরের চুলা বন্ধ ছিল অধিকাংশ এলাকায়। অনেকেই মাটির চুলা এবং ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্না সেরেছেন। আবার কেউ কেউ হোটেল–রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে প্রয়োজন মিটিয়েছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে হোটেল–রেস্তোরাঁগুলোতেও গ্যাসের সংকট প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, গ্যাসের যোগান কমিয়ে দেয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আরো কয়েকদিন সংকট থাকবে বলেও তিনি জানান।