কক্সবাজারের চকরিয়ায় মারছা পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসের ধাক্কায় মোহাম্মদ রাকিব (২০) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। রাকিবের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার সহপাঠীরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন।
রাকিবের নির্মম মৃত্যুর পর গতকাল সোমবার সকালে ক্লাসে অংশ না নিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে চকরিয়ার ডুলাহাজারা কলেজের সামনে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তারা সড়কের ওপর বসে থাকায় সড়কের উভয়দিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এ অবস্থায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান, এসি ল্যান্ড মো. রাহাত উজ–জামান, থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী, মালুমঘাট হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মো. মাকসুদ আহমদ, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর উপস্থিত হয়ে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করেন। এরপর মহাসড়ক ছেড়ে দেয় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা পর মহাসড়কটিতে ফের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি কয়েকটি দাবি জানায়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে– দুর্ঘটনার সব দায়ভার মারছা পরিবহন মালিককে বহন করতে হবে। ডুলাহাজারা কলেজের সামনে স্পিড ব্রেকার স্থাপন করতে হবে। কলেজ ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক পারাপারে হাইওয়ে বা ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অর্ধেক ভাড়ার সুবিধা প্রদান করতে হবে।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর দৈনিক আজাদীকে জানান, গত রোববার দুপুর দেড়টার দিকে কলেজ ছুটির পর মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাকিব। এ সময় দ্রতগামী মারছা পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ধাক্কা দেয় রাকিবকে। এতে গুরুতর আহত হলে তাকে প্রথমে মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন রাকিব। তার বাড়ি ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বালুরচরের ষোলহিচ্ছা গ্রামে। রাকিব ওই গ্রামের মনছুর আলমের পুত্র।
রাকিবের সহপাঠি কলিম উল্লাহ, আবরারুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, রোববার দুপুরে বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় রাকিব। এ সময় ক্ষুব্ধ সহপাঠিরা কয়েকটি বাসে ভাঙচুরও চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও কলেজ শিক্ষকেরা দ্রুত মহাসড়কে গিয়ে মহাসড়ক থেকে সরে যেতে বাধ্য করেন। কিন্তু রাকিব মারা গেছেন, এই খবরে ফের ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সহপাঠিরা। তাই গতকাল সোমবার সকাল দশটার দিকে নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে তারা মহাসড়কে বসে পড়েন।
মহাসড়কের মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদ আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, কলেজশিক্ষার্থী রাকিবকে ধাক্কা দেওয়া মারছা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি জব্দ করে হাইওয়ে থানায় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চালক ও সহকারী পলাতক থাকায় কাউকে আটক করা যায়নি। এই ঘটনায় অবশ্যই আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
চকরিয়া উপজেলার ইউএনও জেপি দেওয়ান আজাদীকে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রধান দুটি দাবি হচ্ছে কলেজের সামনে গতিরোধক স্থাপন এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সময় বাসে যাতে অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হয়। এই দুটি দাবি অবশ্যই বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হবে। এজন্য সকল বাস মালিক বা কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি সমাধান করা হবে। আর গতিরোধক স্থাপনের কাজও দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে।