বাল্য বিবাহ, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

তরুণ কান্তি বড়ুয়া | সোমবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিবাহ সভ্য সমাজ ব্যবস্থার একটা মৌলিক ভিত্তি। এটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি প্রাচীনতম বিধি। সভ্যতার এই বিধি মেনে স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন শুরু যার মাধ্যমে মানব জাতি লাভ করেছে সন্তান দান প্রক্রিয়ার বৈধ আইনগত স্বীকৃতি। কাজেই বিয়েটা হচ্ছে বিধিবদ্ধ সামাজিক চুক্তি বা বন্ধন যা মানব সভ্যতার সৃষ্টিলগ্ন থেকে চলে আসছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষের মাঝে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক সম্পাদিত বিয়েই বাল্যবিবাহ। বয়সের তারতম্যকে গুরুত্ব না দিয়ে অভিভাবকদের অবিবেচনা প্রসূত অনুমতি সাপক্ষে নির্ধারিত বয়সের পূর্বে এ ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে বিয়ের নামে বাল্যবিবাহ বর্তমানে পৃথিবীর দেশে দেশে বিশেষ করে এশিয়া এবং আফ্রিকায় সামাজিক ব্যধিসরূপ এক আতঙ্কিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। নাইজার, চাদ, মালি, ভারত, বাংলাদেশ, গিনিসহ মধ্য আফ্রিকার কিছু দেশে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি যা প্রায় ৬০%। ২০০৩২০০৯ খ্রিস্টাব্দের একটি জরিপ মতে নাইজার, চাদ, বাংলাদেশ, মালি ও ইথিওপিয়াতে ১৫ বছরের নীচে শিশুদের বাল্যবিবাহের হার ২০% এর উপরে। শিল্প বিপ্লবের পূর্বে ভারত, চীন এবং পূর্ব ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক অংশে নারীদের মধ্যে কিশোর বয়সে বয়:সন্ধিতে পৌঁছানোর পর পরই বিয়ে করার প্রবনতা ছিল। ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহ একটি প্রচলিত প্রথা। তবে এই প্রথা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বিংশ শতাব্দীর দিকে যখন বিভিন্ন দেশে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স বৃদ্ধি পায়। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সমাজেও মেয়েদের সাধারণত বয়:সন্ধির আগেই বিয়ে দেয়া হতো। প্রাচীন গ্রীসে কম বয়সে বিয়ে ও মাতৃত্ব উৎসাহিত করা হতো। এমনকি ছেলেদেরও তাদের কৈশোরেই বিয়ের জন্য উৎসাহ দেওয়া হতো। প্রাচীন রোমে মেয়েদের বিয়ের বয়স ছিল ১২ বছরের উপর এবং ছেলেদের ১৪ বছরের উপরে। মধ্যযুগে ইংলিশ আইন অনুসারে ১৬ বছরের পূর্বে বিয়ে সর্বজন স্বীকৃত ছিল। বেশির ভাগ ধর্মমতে বিবাহযোগ্য বয়সকেই সমর্থন করা হয়। খ্রিষ্টধর্ম মতে বয়:সন্ধির আগে কোনো বিয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হিন্দু বৈদিক লিপিতে মেয়েদের বিয়ে বয়স:ন্ধি শুরুর ৩বছর পর বিয়ে করার নির্দেশ রয়েছে। ইহুদি বিশেষজ্ঞগণও বয়সন্ধির পূর্বে বিয়ে নিরুৎসাহিত করেছেন। ইসলামি বিয়ের প্রথানুযায়ী কারো কারো মতে সময়ানুক্রমিক বয়স নয়, বরং অভিভাবকেরা যখন মেয়েকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিবাহযোগ্যা মনে করবে, সেটিই হবে বিয়ের উপযুক্ত বয়স। ছেলেদেরও কখনো কখনো অপরিণত বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। তবে তুলনামূলকভাবে মেয়েরাই বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে থাকে।

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন মতে ইতিপূর্বে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা ছিল ১৪ বছর এবং ছেলেদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারিত ছিল ১৮ বছর। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে এই আইনে পরিবর্তন ঘটিয়ে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয় ১৮ বছর এবং ছেলেদের করা হয় ২১ বছর। আসলে বাল্যবিবাহ ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরাই বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে থাকে। বাল্যবিবাহের দৃশ্যত কারণগুলো হলো যৌতুক, দারিদ্র্যতা, বাল্যবিবাহ সমর্থনকারী আইন, অবিবাহিত থাকার শঙ্কা, নিরক্ষরতা এবং মেয়েদের উপার্জন অক্ষম ভাবা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণসমূহ বাল্যবিবাহের জন্য কম দায়ী নয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহ, এমনকি আফ্রিকার কিছু কিছু অঞ্চল, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং ওশেনিয়া প্রভৃতি দেশে বাল্যবিবাহ বহুল প্রচলিত। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে আইনী শিথিলতার কারণে ১৭টি রাজ্যে বিয়ের ব্যাপারে ন্যূনতম বয়সের প্রয়োজন নেই।

প্রেক্ষাপট বিচারে দেখা যায় বাল্যবিবাহ বাংলাদেশে এক মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। মেয়েদের ওপর বাল্যবিবাহের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রেক্ষিতে। বাংলাদেশে ৫১% নারী ১৮বছর বয়সের পূর্বে এবং ১৫% নারীর ১৫ বছরের পূর্বে বিয়ে হয়ে থাকে। বাল্যবিবাহ গ্রামাঞ্চলে অধিক হয়ে থাকে যেখানে ৫৪% নারীর ১৮ বছরের পূর্বে বিয়ে হয়ে থাকে, তুলনামূলকভাবে শহরে হয় ৪৪%। ধর্মীয় শিক্ষার অভাবহেতু বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। মূলত বাল্যবিবাহ বাংলাদেশে একটি মারাত্মক সমস্যা যেটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বিরাট অন্তরায় হয়ে বিরাজ করে। এটি একটি অপ্রত্যাশিত সামাজিক নিয়ম যার ফলশ্রুতিতে উচ্চ জন্মহার দেশে নিয়ন্ত্রণহীন চাপ হিসেবে বিবেচিত। বাল্যবিবাহের অদূরদর্শীতামূলক প্রতিবন্ধকতা সমাজে সমস্যা সৃষ্টি করে। বাল্যবিবাহ শিশু অধিকার হরণ করার অন্যতম মারনাস্ত্র এবং নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নীরব হাতিয়ার। বাংলাদেশের সামাজিক অবকাঠামো অনুসারে শিশুরা পিতামাতা, পরিবারের উপার্জনক্ষম অন্যান্য সদস্যদের ওপর নিভর্রশীল। পিতামাতা, অনেক সময় রাষ্ট্র ব্যবস্থাও এসব শিশুদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে বা সামাজিক নিরাপত্তা দিতে অসহায়ত্ব বোধ করে। শিশুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীন ঝুঁকির সম্মুখীন। তারা দুর্বল একটা শ্রেণী যাদের জন্য বাল্যবিবাহ বহুবর্ষজীবী একটা সমস্যা। বাল্যবিবাহ যদিও একটা বৈশ্বিক সমস্যা, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এটি উদ্বেগজনক সমস্যা, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুকিশোরীর জন্য মারাত্মক শিশু অধিকার লংঘন। বাল্যবিবাহের কারণে নারী শিশুরা শিক্ষাজীবন সমাপ্তি কিংবা শিক্ষাক্রম চালিয়ে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। বাল্যবিবাহ এমন একটি জটিল সমস্যা যা গোটা সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ। গ্রামাঞ্চলে দারিদ্রতা, স্বাক্ষরতার অভাব এবং অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের অভাবহেতু পিতামাতার কাছে কন্যাসন্তান বোঝা স্বরূপ বিবেচিত হলে তাঁরা বোঝা কমানোর লক্ষ্যে কন্যাসন্তানদের জন্য বাল্যবিবাহের ব্যবস্থা করে। শিশুদের মানসিক চিন্তাচেতনা অপরিপক্ক বিধায় তারা বাল্যবিবাহের অশুভ পরিনতির বিষয়টা ভাবতে পারেনা। অন্যদিকে মেয়েদের বেশিদিন বসিয়ে রাখলে যৌতুকের পরিমাণ বেড়ে যাবে ভেবে পিতামাতা ঘাড়ের বোঝা কমাতে মেয়েদের বাল্যবিবাহ মেনে নিতে বাধ্য করে। ভেঙে যাওয়া পরিবারের সন্তানরা বিশেষকরে কন্যাসন্তানগণ বেশিভাগ ক্ষেত্রেই বাল্যবিবাহের শিকারে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে পিতামাতা ও অন্যান্য নিকটাত্মীয় যারা এসব সন্তানদের অভিভাবক তারা মনে করে এসব সন্তানদের দীর্ঘদিন দেখাশোনা করাটা একটা বাড়তি দায়িত্ব। তাই দায়িত্ব মুক্ত হওয়ার জন্য পিতামাতারা কন্যা সন্তানদের বাল্যবিবাহের ব্যবস্থা নিয়ে মূলত এসব সন্তানদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণও হচ্ছে বাল্যবিবাহ। শিশুর স্বাস্থ্য, বুদ্ধিমত্তা ও মনস্তাত্ত্বিক বৃদ্ধিতে বাল্যবিবাহের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিভাত হয়। সীমিত জ্ঞানের কারণে অনেক পিতামাতা মনে করে বয়:সন্ধি হওয়ার সাথে সাথে মেয়েদের বিয়ে দেওয়াটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। অধিকন্তু আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা অপর্যাপ্ত বিধায় অনেক পিতামাতা মেয়েদের যথাযথ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। যৌন নিপীড়ন, বখাটে বালক এবং স্থানীয় কিছু বিপথগামী যুবক দ্বারা এসব নিরীহ মেয়েরা রাস্তাঘাটে হয়রানি ও অপমানের শিকার হয়। এমনকি কখনো কখনো রাস্তায় কিংবা অন্যান্য স্থানে রিক্সা চালক, বাস ড্রাইভার কিংবা সহপাঠীদের দ্বারা মেয়েরা নিগৃহীত বা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। আবার নিজেদের তথা সন্তানের মান সম্মানের কথা ভেবে পিতামাতাগণ যৌন নিপীড়কদের ঘৃণ্য অপরাধের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কোনো কোনো সময় দেখা যায় গ্রাম্য মাতব্বর বা তথাকথিত সমাজপতিদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে অপরাধী অপকর্মের অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যায়। ফলে সহ্যের সীমানা হারিয়ে অনেক মেয়েরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কাজেই পিতামাতা উদ্বিগ্নতায় দিন কাটায় কিভাবে তাদের কন্যাসন্তানদের সম্ভ্রম ও সতীত্ব রক্ষা করা যায়। পিতামাতাগণ এও ভাবে হয়তো নিপীড়নের শিকার হয়ে এসব কন্যাসন্তান নেশায় আসক্ত বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। কাজেই অনেক পিতামাতা মনে করে, একমাত্র বিবাহ তাদের কন্যাসন্তানদের রক্ষা করতে পারে। তাই বাল্যবিবাহের নেতিবাচক দিকগুলো জানা সত্ত্বেও স্বল্প সময়ে কন্যাসন্তানদের বিয়ে দিয়ে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতা তাঁদের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে উদগ্রীব হয়ে উঠে। বাল্যবিবাহ রোধ করার আইনগত বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা পিতামাতার কাছে দুরূহ বিষয় হয়ে উঠে। পিতামাতা এবং অভিভাবক শ্রেণির অনেকে নেপথ্যে সাহায্য করে বিধায় ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন’ অপরাধমূলক বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় পিতামাতাগণ নকল জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরির মাধ্যমে কন্যাসন্তান বিবাহযোগ্যা বয়সে না পৌঁছার পূর্বেই বাল্যবিবাহের ব্যবস্থা করে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনিবন্ধিত বাল্যবিবাহের কারণে অপকর্মটির সাথে জড়িত ব্যক্তিরা দেশে প্রচলিত আইন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও উদাহরণযোগ্য শাস্তি পাওয়া থেকে অব্যাহতি পেয়ে যায়।

বাল্যবিবাহ জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হওয়ায় অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীশিশুর স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। বাল্যবিবাহের ফলে যৌন বাহিত রোগ, জরায়ু মুখ ক্যান্সার, অনিচ্ছাকৃত গর্ভাবস্থা, স্বল্প ওজনের সন্তান জন্মদান, মাতৃ এবং শিশু মৃত্যুর কারণ ঘটায়। বাংলাদেশে জনসংখ্যার অধিকাংশ হচ্ছে শিশুরা যাদেরকে উৎপাদনশীল সম্পদে পরিণত করতে বাল্যবিবাহ নিরুৎসাহিত করে তাদেরকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। বাল্যবিবাহের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে সর্বক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি বাল্যবিবাহের নেতিবাচক কুফল সম্পর্কে সকল শ্রেণির জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং প্রয়োজনে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাল্যবিবাহ প্রথা নির্মূলে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নির্মূল করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে মারাত্মক হুমকির কারণ হবে। শিক্ষা, চাকরির সুযোগ, সামাজিক নিরাপত্তা এবং আইনগত সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বাল্যবিবাহ নির্মূলে শিশু অধিকার রক্ষার বিষয়টিও অকার্যকর থেকে যাবে। যার কারণে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাতীয় লক্ষ্য অর্জন ব্যহত হবে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ নয় যেটি বাল্যবিবাহের সমস্যায় জর্জরিত, বরং বিশ্বের অনেক দেশও এ ধরনের মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি। তবে উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ্যণীয় যে বাংলাদেশে এ সমস্যাটি সর্ব মহলে ভীষণ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতো বাল্যবিবাহ রোধের প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা অর্জন, বিবাহের ন্যূনতম বয়স সংক্রান্ত বিধি কার্যকর করা এবং অভিভাবকদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকি সম্পর্কে আরো সচেতন করে তোলা। বিগত দুই দশকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অনেক সূচকে বাংলাদেশের ঈর্ষনীয় সফলতা ও অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে এখনকার জনগণ পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন সমস্যার মূলে অনুসন্ধান চালিয়ে বাস্তব সমাধান খুঁজে বের করা। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমাদের প্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো মেয়েদের নিরাপদ পথচলা নিশ্চিত করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, রাস্তাঘাট এবং গণ পরিবহনে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং যৌন হয়রানি মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যৌতুক প্রথাকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে আইনকে যুগোপযোগী করার সরকারি উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর করতে হবে। যোগ্যতা অনুযায়ী অধিক হারে নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। স্বল্প শিক্ষিত এবং শিক্ষায় ঝরে পড়া মেয়েদের জন্য যথাযথ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অতএব সকলের সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে সমাজ হতাশামূক্ত হয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাবে এবং সমাজ জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠুকএই হোক সকলের আন্তরিক প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক; প্রাক্তন অধ্যক্ষ, রাংগুনিয়া সরকারি কলেজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মার্ট স্কুলবাস ও নিরাপদ শিক্ষাজীবন
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে জনসংখ্যার গতিপ্রকৃতি এবং নগরায়ন ব্যবস্থা