ফটিকছড়ির খিরামের সর্তা খালে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দৌরাত্ম্য। ড্রেজার মেশিন দিয়ে দেদারসে চলছে বালু উত্তোলন। এর ফলে মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মূল্যবান কৃষিজমি ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে চালানো হচ্ছে এসব অবৈধ কার্যক্রম। তাদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না কেউ। একাধিকবার এসব এলাকায় প্রশাসন অভিযান চালালেও কোনো লাভ হয়নি।
সরেজমিন খিরামে সর্তা খাল ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণ খিরাম হচ্ছার ঘাট সর্তা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। একইরকম খিরাম বাজারের পূর্ব পাশেও উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বালু তোলার এ মহোৎসব। এতে পানির প্রবাহে গতি পরিবর্তন হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়ি–ঘর খালে বিলীন হওয়ার পথে। বালু উত্তোলনের পর বালুর গাড়ি পরিবহন করা হচ্ছে মানুষের কৃষিজমির উপর দিয়ে। এতে জমির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়কগুলোও। তবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
খিরাম এলাকার কয়েকটি গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বালু উত্তোলনের কারণে দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলন আমাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়বে। আমাদের গ্রাম, খাল, রাস্তা গ্রাস করে নিচ্ছে। প্রশাসন যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে হয়ত আমাদের জীবনটা বাঁচবে। গ্রামের বাসিন্দা মো. মফিজুল আলম বলেন, খালটা অনেক দূরে ছিল। আমরা নদীর অনেক দূরে গিয়ে গবাদি পশু গোসল করাতাম। বালু তোলার ফলে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আধা মাইল পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন আমাদের কয়েকটি গ্রাম ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। মো. বাহাদুর নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভেঙে যাচ্ছে। মূলত অবাধে বালু তোলার কারণে সবসময় আতঙ্কে থাকি। কখন জানি আমাদের বাড়িঘর পানিতে চলে যায়। প্রভাবশালী চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।
এদিকে ফটিকছড়িতে ২০২৪ এর ভয়াবহ বন্যায় এ এলাকার একাধিক স্থানে সর্তা খালের বাঁধ ভেঙে বাড়িঘরসহ খালের বাঁধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বর্তমানে ২৫টি স্থানে ভাঙন প্রতীরক্ষা বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। পাউবোর উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সোহাগ তালুকদার বলেন, খালের তলদেশ থেকে বালি উত্তোলন করা হলে ভবিষ্যতে সেসব স্থানে নতুন করে খাল ভাঙন হতে পারে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালালেও অদৃশ্য কারণে এসব বন্ধ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কারণে খালের বাধ, কৃষি জমি ও গ্রামীণ সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অবৈধ বালু মহালের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সর্তা খালে বালি উত্তোলনের ব্যাপারে আমরা খবর নিচ্ছি।