চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট প্রকল্পের কাজ শুরুতে বাধা কেটে গেছে। সম্প্রতি পরিবেশ অদিধদপ্তর থেকে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের (ইআইএ) অনুমোদন পেয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে অবশ্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে টর (টার্ফ অব রেফারেন্স) এরও অনুমোদন নেয়া হয়। ফলে গত মাসে পাহাড় কাটার অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজ পুনরায় শুরু করেছেন চীনা প্রকৌশলীরা। তবে ভবনের মূলভিত্তির কাজ শুরু হতে আরো এক মাস সময় লাগতে পারে বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর গোঁয়াছি বাগান এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে হচ্ছে বার্ন হাসপাতাল। তাই ভৌত অবকাঠামোগত কাজ করার আগে ঝুঁকিপূর্ণ খাড়া পাহাড়কে ঢালু আকারে কেটে এতে চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাম বসানো হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে পাহাড় ধসের শঙ্কা কমে আসবে। পরে যে জায়গায় পাইলিং করা হবে সেখানে উন্নতমানের ঘাস লাগানো হবে। যাতে বৃষ্টি হলে তা গড়িয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যায়। এছাড়া পাহাড়টি রক্ষার জন্য রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ করা হবে। দেয়ালটি প্রকৌশলগতভাবে যাতে মজবুত হয়, সেজন্য চীনা প্রকৌশলীদের ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে। এতে পাহাড়টি অক্ষত থাকবে। তবে গত মাসের শুরুর দিকে বার্ন হাসপাতাল নির্মাণে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাহাড় কাটছে এমন অভিযোগ এনে কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। সেই সময় পাহাড় কাটার সমালোচনার মুখে অংশীজনদের সাথে মতবিনিময়ও করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, আসলে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাহাড় কাটছে বলে গত মাসে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে প্রকল্পের চীনা প্রকৌশলীরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পাহাড় কাটার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। আসলে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভুল বুঝাবুঝি। আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের অল্প একটু প্রক্রিয়া বাকি ছিল। সম্প্রতি আমরা সেটিও পেয়ে গেছি। গণমাধ্যমে যেটি পাহাড় কাটা বলছে, এটি প্রকৌশলীদের ভাষায় ‘সয়েল নেইলিং’। এখানে পাহাড়ের মধ্যে পাইল করা হবে এবং কলাম বিম দিয়ে ঘিরে রাখা হবে। এতে পাহাড় অক্ষত থাকবে। ভারি বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে পড়বে না। এই টেকনোলজি চট্টগ্রামে আগে কখনো ব্যবহার করা হয়নি। চীনা প্রকৌশলীদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। এখন সমতলে কাজ চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে ভবনের মূল ভিত্তির কাজ শুরু হতে পারে।
উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় ১৫০ বেডের বিশেষায়িত ‘বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিট চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় গত ১২ জুন। এর আগে গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বার্ন ইউনিট প্রকল্পের অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে চীন দেবে ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং সরকার দেবে ১০৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এছাড়া চীন থেকে আমদানিতে ট্যাঙ ভ্যাট বাবদ ৭০ কোটি টাকাসহ সংযোগ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, বৈদ্যুতিক সংযোগ, দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও কেমিক্যাল রিঅ্যাজেন্ট আনার খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা ভবন, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ল্যাবরেটরি, অপারেশন থিয়েটার, ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি পুরুষ এইচডিইউ বেড, ১০টি মহিলা এইচডিইউ বেড ও ৫টি শিশু এইচডিইউ রয়েছে। এছাড়া ১১৫ বেডের ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য বেড রাখা হয়েছে ৪৫টি।