বার্ন ইউনিট হবে, পাহাড়ও বাঁচবে

চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট প্রকল্পে পাহাড় কাটার ব্যাখ্যা দিল কর্তৃপক্ষ পরিবেশের অনুমোদন পাওয়ার আগে পাহাড় কাটায় সমালোচনা, আপাতত কাজ বন্ধ অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে বলছেন হাসপাতালের পরিচালক

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার আগে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট প্রকল্পের জন্য পাহাড় কাটার সমালোচনার মুখে অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের সভা কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রকল্প কাজের পাহাড় কাটার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। তিনি বলেন, পাহাড় আসলে ওইভাবে কাটা হচ্ছে না। যেহেতু পাহাড়ের পাশে সমতলে হবে বার্ন হাসপাতালের ভবন। তাই ভৌত অবকাঠামোগত কাজ করার আগে ঝুঁকিপূর্ণ খাড়া পাহাড়কে ঢালু আকারে কেটে এতে চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাম বসানো হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে পাহাড় ধসের শঙ্কা কমে আসবে। যে জায়গায় পাইলিং করা হবে সেখানে উন্নতমানের ঘাস লাগানো হবে। যাতে বৃষ্টি হলে তা গড়িয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যাবে। এছাড়া পাহাড়টি রক্ষার জন্য রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ করা হবে। দেয়ালটি প্রকৌশলগতভাবে যাতে মজবুত হয়, সেজন্য চীনা প্রকৌশলীদের ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে। এতে পাহাড়টি অক্ষত থাকবে।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, পরিবেশ অদিধদপ্তর থেকে আমরা টর (টার্ফ অব রেফারেন্স) অনুমোদন নিয়েছি। এছাড়া এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রস্তুত করা হয়েছে। সেটি জমা দিলে আমরা অনুমোদন পেয়ে যাবো। আমরা আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি। কারণ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পাহাড় কাটা নিয়ে নিউজ হওয়ার পর রিজওয়ানা ম্যাডাম স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ম্যাডামকে কল দিয়ে বিষয়টি জানান। এরপর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ম্যাডাম আমাকে কল দিয়ে পাহাড়ে যে কাজটি চলছে সেটা বন্ধ রাখতে বলেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই পরে কাজ শুরু করার জন্য বলেন আমাকে। অনুমোদন পেলেই আমরা আবার কাজ শুরু করবো। অনুমতি না নেওয়া আমাদের ভুল হয়েছে। তবে এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। ম্যাডাম বলেছেন, আপাতত কাজ স্টপ রাখতে। তাই স্টপ রেখেছি।

যথাসময়ে প্রকল্পের শেষ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২ বছর। কিন্তু চীনা প্রতিনিধি দল নির্ধারিত সময়ের আগে এই কাজ শেষ করে ফেলতে পারবে বলে জানিয়েছে। তাদের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

বার্ন ইউনিট প্রকল্পের চীনা প্রকৌশলী মে ইইউ চ্যাং বলেন, পাহাড়টা দেখার পর মনে হয়েছেপাশে ভবন হলে জায়গাটি নিরাপদ হবে না। কারণ ভবনে বেইজ করার সময় পাহাড় ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। পাহাড়ের মাটিগুলো খুবই নরম। পানির স্পর্শ পেলে নিচের দিকে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৌশলীরা সয়েল নেইলিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পাহাড়টি ড্রেসিং করে কলাম বসিয়ে কাজ করবে এবং সেখানে ঘাস রোপন করা হবে। এখানে পাহাড়ের কোনো ক্ষতি হবে না। সভায় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম খান বলেন, এটা সয়েল নেইলিং, এখানে পাহাড়ের মধ্যে পাইল করা হবে এবং কলাম বিম দিয়ে ঘিরে রাখা হবে। পাহাড়টা কোনোভাবেই পড়বে না। এই টেকনোলজি চট্টগ্রামে আগে ইউজ হয়নি। চীনাদের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করছি। চেষ্টা করব তাদের কাছ থেকে এই টেকনোলজি হায়ার করতে। চট্টগ্রামে সবসময় যে বাটালি হিলের পাহাড় ভেঙে যাচ্ছে সেটা প্রতিরোধে নেইলিং করে ঘিরে দেয়া যায় এই প্রক্রিয়ায়।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার ফারমিন এলাহী বলেন, গত বছরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছিল। আপনাদের (চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) সঙ্গে যখন চীনের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছিল তখন তো কথাটি এমন হওয়া উচিত ছিল যে, আপনারা পরিবেশের ছাড়পত্র নেবেন। কথা বলবেন। এরপর কাজে আগাবেন। গত ৫ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আপনাদের ওখানে পরিদর্শনে যায়। আমরাও গিয়েছিলাম। উনারা আপনাদের একটি নোটিশ দিয়েছিলেন। আগামী ১৩ জানুয়ারি আপনাদের একটি শুনানি আছে। ওখানে পরিষ্কার বলে দিয়েছে পাহাড় কাটা নিয়ে ওনাদের কোনো অনুমোদন নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে? এটা আসলে আমরা আপনাদের কাছে আশা করি না।

সভায় চীনা প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক রাজীব পালিত ও রুমা ভট্টাচার্য এবং বার্ন ইউনিটের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রফিক উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় ১৫০ বেডের বিশেষায়িত ‘বাংলাদেশুচায়না ফ্রেন্ডশীপ বার্ন ইউনিট চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় গত ১২ জুন। এর আগে গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বার্ন ইউনিট প্রকল্পের অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে চীন দেবে ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং সরকার দেবে ১০৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এছাড়া চীন থেকে আমদানিতে ট্যাঙ ভ্যাট বাবদ ৭০ কোটি টাকাসহ সংযোগ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, বৈদ্যুতিক সংযোগ, দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও কেমিক্যাল রিঅ্যাজেন্ট আনার খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা ভবন, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ল্যাবরেটরি, অপারেশন থিয়েটার, ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি পুরুষ এইচডিইউ বেড, ১০টি মহিলা এইচডিইউ বেড ও ৫টি শিশু এইচডিইউ রয়েছে। এছাড়া ১১৫ বেডের ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য বেড রাখা হয়েছে ৪৫টি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেক্সি থেকে নামিয়ে রেল কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত
পরবর্তী নিবন্ধশেখ পরিবারকে প্লট বরাদ্দে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে : দুদক মহাপরিচালক