বার্ন ইউনিটের কাজ চলছে ঢিমেতালে

চমেক হাসপাতাল ৭ মাসে কাজ হয়েছে ১৫-১৮ শতাংশ অর্থ ছাড় না হওয়ায় চীনা নির্মাণ সামগ্রীর ভ্যাট – ট্যাক্স পরিশোধে জটিলতা

জাহেদুল কবির | শনিবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর গোয়াছি বাগান এলাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট প্রকল্পের কাজ চলছে ঢিমেতালে। কাজ শুরুর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সমাপ্ত হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশের মতো। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেভাবে এগোচ্ছে না। ধীরগতির কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়তে পারে প্রকল্পের মেয়াদ। এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, প্রকল্পের কাজের নির্মাণ সামগ্রী আসছে চীন থেকে। এসব নির্মাণ সামগ্রীর যাবতীয় ভ্যাটট্যাক্স পরিশোধ করার কথা সরকারের। তবে অর্থ ছাড় না হওয়ায় নির্মাণ সামগ্রী আনতেও সমস্যা হচ্ছে। অর্থছাড় হয়ে গেলে তখন এই জটিলতা থাকবে না। কাজের গতিও বাড়বে। গতকাল বিকেলে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে কাজ চলছে ধীরগতিতে। ইতোমধ্যে হাসপাতালের ভবনের মূল ভিত্তির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মূল ভবনের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের ধস এড়াতে নকশা অনুযায়ী সয়েল নেইলিং (খাড়া পাহাড় কেটে ঢালু করা) করা হয়েছে।

চীনা প্রকৌশলীরা বলছেন, পরবর্তীতে এসব ঢালু পাহাড়ে চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাম বসানো হবে। এছাড়া পাইলিং করে সেখানে উন্নতমানের ঘাস লাগানো হবে। যাতে বৃষ্টি হলে তা গড়িয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যায়। পরে পাহাড় রক্ষার জন্য রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ করা হবে।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, বার্ন ইউনিটের প্রকল্পের কাজ কিছুটা ধীরগতিতে হচ্ছে এটি ঠিক। তবে ভবনের বেসমেন্টের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এখন ভবনের পিলার নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রীর ভ্যাটট্যাক্স পরিশোধে অর্থছাড় নিয়ে কিছুটা প্রক্রিয়াগত সমস্যা হয়েছিল। তবে আমি যতটুকু জানি, খুব শিগগিরই সেই সমস্যা কেটে যাচ্ছে। অর্থছাড় হলে কাজের গতিও বাড়বে।

জানা গেছে, বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে গুরুতর আগুনে পোড়া রোগীদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সংকট ও নানা সমস্যার কারণে এখানে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে এ রোগীদের ঢাকার বিশেষায়িত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে ছুটতে হয়। সারাদেশের রোগীর চাপ থাকায় অনেক সময় চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হয়।

উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় ১৫০ বেডের বিশেষায়িত ‘বাংলাদেশচায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিট চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় গত বছর ১২ জুন। এর আগে গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বার্ন ইউনিট প্রকল্পের অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে চীন দেবে ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং সরকার দেবে ১০৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এছাড়া চীন থেকে আমদানিতে ট্যাক্স ভ্যাট বাবদ ৭০ কোটি টাকাসহ সংযোগ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, বৈদ্যুতিক সংযোগ, দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও কেমিক্যাল রিঅ্যাজেন্ট আনার খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা ভবন, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ল্যাবরেটরি, অপারেশন থিয়েটার, ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি পুরুষ এইচডিইউ বেড, ১০টি মহিলা এইচডিইউ বেড ও ৫টি শিশু এইচডিইউ রয়েছে। এছাড়া ১১৫ বেডের ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য বেড রাখা হয়েছে ৪৫টি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২৬ সালের জুনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে ‘বিরোধের ভার’
পরবর্তী নিবন্ধসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১৮ জেলে ২০ দিন ধরে নিখোঁজ