শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে নির্মাণ করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অতীশ দীপঙ্কর নামে নতুন দুটি হল। বারবার আশ্বাস দিয়ে উদ্বোধনের প্রায় ৮ বছর পরেও এখন পর্যন্ত আসন বরাদ্দ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। হল দুইটিতে মোট এক হাজার ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। এতে আবাসন সুবিধা বাড়বে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ না দিলেও নিয়োগ দেওয়া আছে প্রভোস্ট ও কর্মকর্তা কর্মচারী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কষ্ট করছেন আবাসন সংকটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা আছে সবমিলিয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ। যা খুবই অপ্রতুল। বাহিরে মেস বা কটেজে থাকতে হলে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। যা বহন করা শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে নেই শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে মেস বা কটেজের সুবিধা। অবশেষে শিক্ষার্থীদের দৌড়াতে হচ্ছে শহরের দিকে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, দীর্ঘ ৮ বছর পর আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সেখানে বঙ্গবন্ধু ও অতীশ দীপঙ্কর হলের নানারকম সমস্যা দেখিয়ে দেয়নি আসন বরাদ্দ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিদ্রুত বঙ্গবন্ধু ও অতীশ দীপঙ্কর হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিন্তু আশ্বাস যেন আঠারো মাসে বছরের প্রবাদবাক্যে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে অন্তত পাঁচবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে হলটি খুলে দেয়া হবে। সর্বশেষ আশ্বাসের দুইমাস গেলেও এখনও কোনো কার্যক্রম দেখছেন না শিক্ষার্থীরা। যার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে আটাশ থেকে ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থী। আবাসন ব্যবস্থা আছে মাত্র ২৩ শতাংশের মত। যা আমাদের জন্য একপ্রকার দুর্ভোগের কারণ। বাইরে মেস বা কটেজে থাকতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। যা আমার মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বহন করা কষ্টকর। প্রশাসন বার বার আমাদের আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখছি না। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শামীম ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি দিনাজপুর। আমি এতদূর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছি পড়ার জন্য। কিন্তু আমি কি পড়বো নিজের থাকার জায়গাটাও ভালোমত পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি বঙ্গবন্ধু ও অতীশ দীপঙ্কর হলে আসন বরাদ্দ দিত তাহলে আমাদের মত আবাসন সংকটে ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও উপকার হত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো বারবার আশ্বাস দিয়ে লুকিয়ে যায়। পরে আর খোঁজ পাওয়াই যায় না। এর আগে শিরীণ শাসনামলেও আমাদের থেকে আবেদন এবং ভাইবা নিয়েও আসন বরাদ্দ দেয়নি।
জানা যায়, চবিতে মোট ১২টি আবাসিক হল রয়েছে। এরমধ্যে ৭টি ছাত্রদের ৫টি ছাত্রীদের জন্য। ১২টি হলে মোট আসন রয়েছে ৫ হাজার ৩০৭টি। এতে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও অতীশ দীপংকর হল চালু হলে আবাসিক সুবিধার হার ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশে উন্নীত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ছাত্রদের জন্য ১৮৬ আসন বিশিষ্ট প্রায় ৪৫ হাজার বর্গফুটের দোতলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করা হয়। হলটিতে দুটি লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগার, ৫০ কেভি পাওয়ারের জেনারেটর, ক্যান্টিন, প্রার্থনা কক্ষ, ইনডোর গেম, কমন কক্ষ, ইউনিয়ন কক্ষ, টিভি কক্ষ, ওয়েটিং কক্ষ, প্রভোস্ট কক্ষ, আবাসিক শিক্ষকদের কক্ষ, লন্ড্রি, দোকানসহ রয়েছে সব আধুনিক সুযোগ–সুবিধা। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে দেড় বছর পর ২০১৭ সালের মে মাস থেকে হলটির ঊর্ধ্বমুখী সমপ্রসারণের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ১৮৬ আসন বিশিষ্ট দোতলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলকে ৭৩৮ আসন বিশিষ্ট ছয় তলা ভবন করা হয়। ফলে এর মোট আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজার ৮৪৮ বর্গ মিটার। যার নির্মাণ ব্যয় ৩৩ কোটি ১৪ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ধরা হয়। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হলেও নয় বছরেও চালু হয়নি হলটি। যার কারণে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রে হলটি সংযুক্তি দেওয়া হলেও আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা নানা সময় দাবি জানিয়ে আসছিলেন হলটি খুলে দেওয়ার।
অপরদিকে ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হলের পাশে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের। ২০১৮ সালের ৩০ মে মাসে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হলটির প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হলেও পুনরায় বর্ধিত করে কাজের পরিধি বাড়ানো হয়। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপের কাজ। ৬ মাসের কাজ শেষ হয়নি প্রায় ছয় বছরেও। বার বার বাড়ানো হয় সময়। দীর্ঘসময় নির্মাণ কাজ আটকে থাকায় হলটিতে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার সম্পদ। কয়েকবার লাখ টাকার মালামাল চুরির ঘটনাও ঘটে।
অতীশ দ্বীপঙ্কর হলের প্রভোস্ট এ. জি. এম. নিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখছি নতুন হলে অনেক ত্রুটিপূর্ণ কাজ। যে কাজগুলোর কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। যার কারণে আমরা সিট বরাদ্দ দিতে পারছি না। আমরা পুনরায় ত্রুটিপূর্ণ কাজগুলোর সমাধান করছি। হলের মেরামত কাজ শেষ হলে অতি দ্রুত সিট বরাদ্দ দিয়ে দিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচায (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা হল প্রভোস্টদের সাথে কথা বলেছি, কিছু ত্রুটিপূর্ণ কাজ আছে। যেগুলো দুই সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। আমরা জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীদের ডাকবো এবং সিট বরাদ্দ দিব।