বারইপাড়া খাল খনন হলো না কেন?

প্রধান প্রকৌশলীর কাছে প্রশ্ন মেয়রের

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সনের প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এখনো কেন বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে বলিরহাট হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খালটি খনন করা গেল না তা জানতে চাইলেন কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে।
তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন টাইগারপাসের অস্থায়ী অফিসে চসিকের প্রকৌশলীদের সাথে বৈঠকে বসেন। এসময় মেয়র তাঁর ১০০ দিনের কর্ম পরিকল্পনার পাশাপাশি নতুন নগর ভবন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা কি তাও জানতে চান। তিনি টাইগারপাসে কর্পোরেশনের অফিসে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় কর্মকর্তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে মতামত নেন। সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, প্রধান প্রকৌশলী লে.কর্নেল সোহেল আহম্মেদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন, আবু ছালেহ, মনিরুল হুদা, কামরুল ইসলামসহ নির্বাহী ও সহকারী এবং উপ সহকারী প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
মেয়রের প্রশ্নের জবাবে বারইপাড়া খাল খনন না হওয়ার বিষয়ে কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ খাতে ব্যয় প্রায় ১ হাজার ১ শত ১৯ কোটি টাকা। যা প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ । প্রকল্পটির জিওবি বরাদ্দ ৭৫ শতাংশ খাতের প্রায় ৯১৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যার ৯১১ কোটি টাকা জেলা প্রশাসন তহবিলে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ খাতেই ২০৮ কোটি টাকা এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা সিটি কর্পোরেশন তহবিল থেকে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কর্পোরেশনের আর্থিক এই ব্যয়ভার বহনের সক্ষমতা নাই।
এই খালের মোট প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। জিওবি ৭৫ শতাংশ ও চসিকের তহবিল হলো ২৫ শতাংশ মিলিয়ে টাকার অংকে যা দাঁড়ায় ৩১৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত। অথচ এই প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। সভায় উপস্থিত চসিকের নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এতো বড় প্রকল্পের জন্য মোট ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা লাগবে। কিন্তু আইনে একসাথে এই পরিমাণ জমির অধিগ্রহণের টাকা ছাড়ের কোনো বিধান নেই। তাই জেলা প্রশাসন ৫ ভাগে ভাগ করেছে অধিগ্রহণের বিষয়টা। এছাড়া এলএ শাখায় মামলাও আছে। তিনি বলেন, কাজ শুরু করতে ম্যাচিং ফান্ডের টাকাও দেয়া যাবে না। তাই এই খাল খননে রিভাইস প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও বর্তমানে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি টিম সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে।
মেয়র রেজাউল করিম সভায় আরো বলেন, একসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সুনাম ছিল। এখন দুর্নাম বেশি। এই দুর্নাম ঘুচাতে হবে। তিনি প্রকৌশলীদেরকে পরস্পর দলাদলি না করে আন্তরিকভাবে সততার সাথে কাজ করার পরামর্শ দেন। মেয়র বলেন, আমি আপনারা সবাই একটা পরিবার। কাজেই মিলেমিশে গুণগতমান বজায় থাকে মতো ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ আদায় করুন। কাজের কোয়ালিটি নিশ্চিতে কোনো ছাড় দিবেন না আপনারা। এটা আমার নির্দেশ।
সভায় প্রধান প্রকৌশলী নগরীর ভাঙা সড়কসমূহ মেরামতে প্যাচওয়ার্কের বিশদ বিবরণ ও সহ প্রকৌশলীর পদে অপ্রতুলতা, গাড়ির সংকট, ভারী যান চালানোর উপযোগী দক্ষ চালকের অভাব, অস্থায়ী প্রকৌশলীদের স্থায়ীকরণ, নতুন প্রকৌশলী নিয়োগের বিষয়ে মেয়রের কাছে উপস্থাপন করেন। মেয়র এসব শুনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে কি করা যায় তা দেখবেন উল্লেখ করেন।
৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্ব গ্রহণ : এর পূর্বে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর মোবারক আলীর দায়িত্বভার গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল বলেন, নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নগরবাসীর দায়িত্ব রয়েছে। আমরা ১০০ দিনের কর্মসূচি নিয়ে নালা-নর্দমা পরিস্কার শুরু করবো। মশা নিধনে ওষুধ ছিটাবো। তবে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ আপনারা নালায় আবর্জনা, পলিথিন ফেলবেন না। পরিস্কারের পর নালায় ময়লা ফেলা হলে এর আশেপাশের বাসিন্দাদের জরিমানা করা হবে। স্থানীয় রাজনীতিক আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নব নির্বাচিত কাউন্সিলর মোবারক আলী, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সিদ্দীক ও উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআর্থিক সঙ্গতির অভাবে ৬ বছর পার
পরবর্তী নিবন্ধ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি