কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে চলতি আমন মৌসুমে মাঠে কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত ধান ব্রি–৯০। মাত্র ৩৩ শতক জমিতে চাষ করা উচ্চ ফলনশীল আধুনিক জাতের এ সুগন্ধি ও চিকন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে মহেশখালীর হোয়ানক এলাকায়। ফলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, মহেশখালী দ্বীপের মাটি, পানি ও জলবায়ুসহ পরিবেশ ব্রি–৯০ ধান চাষের যথেষ্ট উপযোগী।
এ ধান দেখতে যেমন চিকন ও সুন্দর, তেমনি সুগন্ধি হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার কৃষকের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অন্যদিকে এ জাতের ধান কম বয়সে পরিপক্ব হওয়ায় কৃষকেরাও খুশি। বর্তমানে ওই এলাকায় স্থানীয় ধানের মাঠে অন্যান্য জাতের ধানে কেবল পুষ্পায়ন হচ্ছে। ধান রোপণ করার মাত্র ১২২ দিনের কম সময়ে আশানুরূপ ফলন পাওয়ায়, এ জাতের ধান নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যেসব জমি মাঝারি উঁচু বা উঁচু তাতে এ ধান চাষ করে ধান কাটার পর সেখানে সরিষা, আলু, শাক–সবজির চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
সাধারণত এ এলাকায় স্থানীয় জাতের আমন ধান অনেক দেরিতে পাকে। যে কারণে নতুন কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। ফলে এলাকার বেশির ভাগ জমি এক ফসলি হওয়ায়, প্রায় সময় ফাঁকা পড়ে থাকে। ব্রি–৯০ একদিকে মাত্র চার মাসের মধ্যেই পাকে অপরদিকে ফলনও বেশি।
হোয়ানক ইউনিয়নের বড় ছড়া গ্রামের কৃষক মো. হাবিব উল্লাহ জানান, উপজেলা কৃষি অফিস হতে কৃষি সমপ্রসারণ প্রকল্পের আওতায় তাকে বিনামূল্যে ব্রি–ধান ৯০ বীজ দেওয়া হয়। এবারই প্রথম এ জাতের ধান চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। তার জমিতে ধান পাকার পর ফলন দেখে, অনেকেরই এ ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, মাত্র ৩৩ শতক জমিতে এতো ফলন পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ ধানের চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। কেবল এই এলাকাতেই নয়, সারা দেশে আগাম আমন ধান হিসেবে ব্রি–৯০ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, এবং কৃষকেরা চাষাবাদ করে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সমপ্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনা সহায়তা দিয়ে থাকে। আমরা বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ অর্থ প্রদানসহ কারিগরি সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। তাঁরই দৃষ্টান্ত উদাহরণ হোয়ানকের কৃষক মো. হাবিব উল্লাহ।
হোয়ানক ইউনিয়নের উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাগর বলেন, রোপা আমন মৌসুমে ২০২৩–২৪ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের আওতায় হোয়ানক বড়ছড়া গ্রামের কৃষক মো. হাবিব উল্লাহকে ব্রি ধান–৯০ (সুগন্ধি চিকন) ধানের প্রদর্শনী দেওয়া হয়। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় আমি নিয়মিত মাঠ তদারকির মাধ্যমে চিকন ও সুগন্ধিযুক্ত এ চালের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি, আগামী মৌসুমে আমার এই হোয়ানক এলাকায় আরো ব্যাপক চাষাবাদ হবে।