বাবুলের পরকীয়ার জেরে টাকা দিয়ে খুন

অন্য আসামিদের নিয়ে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রথম সাক্ষ্যে মিতুর বাবার অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে আমার মেয়ে মাহমুদা খানম মিতুকে টাকা দিয়ে খুন করান বাবুল আক্তার। এজন্য অন্য আসামিদের নিয়ে পরিকল্পনা করা হয় এবং বাস্তবায়ন করা হয়। সন্তানকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথেই খুনিরা জঘন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন মিতুর বাবা ও বাবুল আক্তারের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।

গতকাল চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিন তার সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। এ সময় বাবুল আক্তার, সহযোগী মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও এহতেশামুল হক ভোলা কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। মামলার অপর দুই আসামি কামরুল ইসলাম মুসা ও খায়রুল ইসলাম কালু পলাতক আছেন। মহানগর পিপি আবদুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করে আজাদীকে বলেন, চার্জ গঠন পরবর্তী আলোচিত এ মামলায় মোশাররফ হোসেনই প্রথম সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে তার সাক্ষ্য এখনো শেষ হয়নি। আগামী ধার্য তারিখেও (২ মে) আদালত তার বক্তব্য শুনবেন। মোশাররফ হোসেন মামলার এক নম্বর সাক্ষী বলেও জানান তিনি।

বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, মোশাররফ দীর্ঘ সাক্ষ্যে মিতু হত্যার ঘটনা, জানাজা ও দাফন, বাবুল আক্তারের বাদী হয়ে মামলা করা, পরে তাদের ঢাকার বাসায় বাবুলের অবস্থান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি অফিসে নেওয়া, কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় বাবুলের সঙ্গে একজন নারী এনজিও কর্মীর সম্পর্ক, এর জেরে মিতুবাবুলের সম্পর্কের অবনতি, মিতুর একাধিকবার ঘর ছাড়ার চেষ্টা এবং আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়ে বিস্তারিত বলেন।

আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাবুল আক্তার পরকীয়ার কারণে ষড়যন্ত্র করে মিতুকে হত্যা করেছে। আসামিদের সাথে গোপনে বৈঠক করেছে, তাদের টাকা দিয়েছে। তারপর হত্যা বাস্তবায়ন করেছে। এই বিষয়টি আজ সাক্ষ্যে বলেছি। এরপর আসবে আমার মামলার প্রশ্ন। সে বিষয়ে সাক্ষ্য এখনও হয়নি।

সাক্ষ্য শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি আবদুর রশিদ বলেন, এটা পরিকল্পিত একটা হত্যাকাণ্ড। বাবুল আক্তার যে পরিকল্পনা করেছেন, অন্যান্য আসামিদের যে প্রস্তুত করেছেন পরিকল্পিত একটা হত্যাকাণ্ডের জন্য, সেটাই আজকের সাক্ষ্যে এসেছে। আজকের সাক্ষ্যে প্রতীয়মান, মিতুকে হত্যায় বাবুল আক্তার যে পরিকল্পনা করেছিল সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, আজ মিতুর বাবা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি একেক সময় একেক বক্তব্য রাখেন। শুরুতে বলেছিলেন, তার মেয়ের সাথে তার জামাইয়ের খুবই সুসম্পর্ক। পরবর্তীতে আরেক কথা বলে তিনি একটা এজাহার করেছেন, যা কোর্ট গ্রহণ করে নাই। আজকে তৃতীয় ধরনের কথাবার্তা বলেছেন। একেক সময় উনার একেক কথা প্রমাণ করে এটা পরিকল্পিত বক্তব্য।

প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া মিতু হত্যা মামলায় গত ১৩ মার্চ চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। এর আগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুলসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে মহানগর হাকিম আদালতে ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল ৬ বছর আগে যে মামলা করেছিলেন তাতে তাকে প্রধান আসামি করে এই চার্জশিট দেয়া হয়। এতে ৫ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তারা হলেন আবু নছর, শাহজামান, সাইদুল ইসলাম সিকদার, নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলাম। এর মধ্যে নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলাম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। চার্জশিটে সাক্ষী রাখা হয় ৯৭ জনকে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাবুল আক্তার কঙবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনএইচসিআর কঙবাজার কার্যালয়ের কর্মী ও ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে স্ত্রী মিতুর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। এর জেরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন বাবুল। একপর্যায়ে খুনিদের ৩ লাখ টাকায় ভাড়া করেন এবং মিশন শেষ করেন। বাবুলকে এ কাজে সহায়তা করেন তার বিশ্বস্ত সোর্স মুসা। পরে পরিকল্পনা মতো জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে বলে প্রচার করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মিতু খুনের রহস্য উদঘাটন করা হয়।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিফটবিহীন দশতলা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম
পরবর্তী নিবন্ধনগরের ৫ মার্কেটের ভূ-গর্ভে জলাধার চায় ফায়ার সার্ভিস