বাবুনগরীকে হেফাজতের আমির পদে চান নজিবুল বশর

| সোমবার , ২ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতে ইসলামের বর্তমান মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির পদে দেখতে চান ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। সমপ্রতি ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট আল জামিয়া আল আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) পরিচালক পদ নিয়ে বিরোধের পর নজিবুল বশরের হস্তক্ষেপে শুরা কমিটির বৈঠকে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ হয়। ওই মাদ্রাসায় গিয়ে ২৫ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ নজিবুল বশর দাবি করেন, নাজিরহাট মাদ্রাসার নেতৃত্ব নিয়ে ‘সরকারের কথাতেই বাবুনগরীর পক্ষ’ নিয়েছেন তিনি।
সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে কওমি মাদ্রাসা নিয়ে অবস্থান, জুনাইদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে ‘জামায়াত সংশ্লিষ্টতার’ অভিযোগ, তাকে হেফাজতের শীর্ষ পদে দেখতে চাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশন নেতা নজিবুল বশর। পরে বিডিনিউজের সঙ্গে আলাপেও এসব বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
এদিকে ওই সংবাদ সম্মেলনের নজিবুল বশরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাতকানিয়া-লোহাগড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী পাল্টা ‘নজিবুল বশরই হেফাজতের আমির হলে ভালো হয়’ বলে মন্তব্য করেছেন এক ভিডিও বক্তব্যে। তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি আর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
সরকার বলায় পক্ষ নিয়েছি : নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) আল্লামা শাহ ইদ্রিস ২৮ মে মারা গেলে নায়েবে মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে সাময়িক দায়িত্ব দেয় শুরা কমিটি। কাসেমী হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সে সময় ওই মাদ্রাসার মোতোওয়াল্লি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফী। জুন মাসে তিনি মাওলানা সলিমুল্লাহকে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম ঘোষণা করেন। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে ২৮ অক্টোবর নাজিরহাট মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠকে হাবিবুর রহমান কাসেমীকেই মুহতামিম করা হয় আর জুনাইদ বাবুনগরী পান মোতোওয়াল্লির দায়িত্ব। ওই মাদ্রাসার শুরা সদস্য মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ফটিকছড়ি নানুপুর বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম এবং জুনাইদ বাবুনগরীর মামা। কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি মেলার পর অভ্যন্তরীণ বিরোধে দুই বছর আগে হেফাজতের নায়েবে আমিরের পদ ছাড়েন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। নাজিরহাট মাদ্রাসার নেতৃত্বের প্রশ্নে মহিবুল্লাহ ছিলেন হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে। ১৮ সেপ্টেম্বর শাহ আহমদ শফী মারা গেলে নাজিরহাট মাদ্রাসার নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে।
এরপর ২৪ অক্টোবর মাওলানা সলিমুল্লাহ সংবাদ সম্মেলন ডাকলে দুই পক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। সেই রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নাজিরহাট মাদ্রাসায় গিয়ে স্থানীয় সাংসদ নজিবুল বশর বলেন, আমি মাইজভান্ডারী হই, যাই হই, এটা দ্বীনের প্রতিষ্ঠান। এখানে কোরআন সুন্নাহর কথা হয়। আমি মুসলমান। আপনাদের পক্ষে ছিলাম, আছি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকব।
পরদিন ২৫ অক্টোবর মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নজিবুল বশরকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি আগে মাওলানা সলিমুল্লাহর পক্ষে ছিলেন, এখন মত পরিবর্তন করার কারণ কী। জবাবে নজিবুল বশর বলেন, আমি সলিমুল্লাহর পক্ষ নিইনি। সরকার বলছে শফী সাহেবের পক্ষ নিতে, নিছি। সরকার এখন বলছে, জুনাইদ বাবুনগরীর পক্ষ নিতে, নিছি। কথা বরাবর। জুনাইদ বাবুনগরী, মহিবুল্লাহসহ সমস্ত কওমি মাদ্রাসাকে নিয়ে আজকে সরকারসহ আমার অবস্থান। আজকে বড় মাদ্রাসাকে যেমন সরকার দেখছে, একইভাবে সারা বাংলাদেশে নিরাপত্তা… এই জুনাইদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে যেখানেই হবে এবং কওমি মাদ্রাসার কথা হবে, সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিব।
পরে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাংসদ নজিবুল বশর বলেন, সরকার না বললেও আমি পক্ষ নিতাম। আমার এলাকাকে আমি হাটহাজারী হতে দিব না। মাথায় এটা ছিল যে সেদিন মাদ্রাসায় জামায়াতে ইসলামীর কেউ যদি ঢুকে ছুরি মারত, তাহলে সারা দেশে কওমি মাদ্রাসার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে যেত। ঝুঁকি জেনেও গিয়েছি বলে পরিস্থিতি শান্ত করতে পেরেছি। সরকার না চাইলে কী প্রশাসন সেখানে সাহায্য করত? যখন যা বলি, সরাসরি বলি। রাখঢাক করি না। যা বলেছি তা ওপেন লাইভে বলেছি।
‘সরকার বলায়’ পক্ষ নিয়েছেন-সাংসদ নজিবুল বশরের এমন দাবির বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কারও বক্তব্য বিডিনিউজ জানতে পারেনি।
হেফাজত যেন বাবুনগরীকে আমির করে : ২৫ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ নজিবুল বশরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী আমির কে হতে যাচ্ছেন বলে তার ধারণা। উত্তরে তিনি বলেন, হেফাজতের আমির কে হবেন না হবেন সেটা হেফাজতের মুরুব্বিরা বসে ঠিক করবেন। আমি বা সরকার এটা বলব না। তবে তিনি (জুনাইদ বাবুনগরী) আমার এলাকার সন্তান। আমি উনার ভাই হিসেবে, উনার বাড়ি ফটিকছড়ি। আমি আশা করব, অনুরোধও করব, হেফাজতের মুরুব্বিরা যারা আছেন, তারা যেন জুনাইদ বাবুনগরীকে হেফাজতের আমির করেন।
দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র : হেফাজতের প্রয়াত আমির আহমদ শফীর ফেলে আনাস মাদানী প্রকাশ্যেই জুনাইদ বাবুনগরীকে ‘জামায়াতের এজেন্ট’ আখ্যায়িত করেছেন। নজিবুল বশর যেহেতু নিজেকে ‘জামায়াত বিরোধী’ হিসেবে পরিচয় দেন, তাহলে তিনি কেন জুনাইদ বাবুনগরীর পক্ষ নিচ্ছেন এবং হেফাজতের সঙ্গে তার সখ্য কীভাবে তৈরি হলো? উত্তরে নজিবুল বলেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে আমি কেইস করেছি এবং কেইসে জিতেছি। যদিও দুর্ভাগ্য, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বা সরকার থেকে স্বীকৃতিটা পাইনি। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী। কারো সাথে ছবি তুললেই জামায়াত হয় না। এরকমই যদি হয়, সেদিন জুনাইদ বাবুনগরী নিজেই বলেছেন, ‘আমি যদি জামায়াত হই তাহলে নদভী কী?’ বুঝেন না কেন? অতএব এসব কোনো কথা নয়। কারো বিরুদ্ধে বলতে চাই না।
তরিকত নেতা বলেন, কাউকে জামায়াত বলে… কৌশল একটা, ধাক্কা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে জুনাইদ বাবুনগরীদের সরায়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। জুনাইদ বাবুনগরী জামায়াতের বিরুদ্ধে বই লিখেছেন। জামায়াতের বিরুদ্ধে ওয়াজ করেন।
তিনি বলেন, কাউকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে না দিয়ে কাছে আনতে পারলে ক্ষতি কী? বাবুনগরীর সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি কথা দিয়েছেন জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। জুনাইদ বাবুনগরী সমপ্রতি ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসায় গেলে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান নজিবুল বশর।
যাকে ঘিরে এই বাগযুদ্ধ, সেই জুনাইদ বাবুনগরীর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও এসব বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল থেকে বদলে যাচ্ছে সুবর্ণ এক্সপ্রেস
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাইজবন্ডের ১০১তম ড্র