বাবা মানে নির্ভরতার ছায়া। বাবা হলেন সেই বটবৃক্ষ, তিনি রোদ–বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে সন্তানকে আগলে রাখেন পরম মমতায়। পৃথিবীর মধুর শব্দগুলোর মধ্যে বাবা ডাক অন্যতম।
বাবা–মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। তবু প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন হয়। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই এ দিবসের প্রচলন শুরু। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়। বাবার চোখের অশ্রু আর ভীতিগুলো সন্তানরা দেখতে পায় না, তার ভালবাসা প্রকাশ পায় না, কিন্তু তার যত্ন ও সুরক্ষা সারা জীবনের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফয়সাল ইসলাম বলেন, বাবার হাত ধরে হেঁটে চলা শিখেছি। সেই হাত হয়তো এখন কাঁপে বয়সের ভারে, কিন্তু তার ছায়া এখনো আমার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে, প্রতিটি সাহসে জড়িয়ে আছে। আমার বাবার একমাত্র সন্তান আমি। বাবা আমাকে ‘বাবা’ বলে ডাকেন। বাবার মুখে সেই ‘বাবা’ ডাকটা যে কি মধুর বলে বোঝাতে পারব না। শুধু একটি দিন নয়, প্রতিটি মুহূর্তে বাবাকে সম্মান, ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে পাশে থাকা–এই হোক বাবা দিবস উদযাপনের আসল বার্তা।
বাবা দিবসের অনুভূতি জানিয়ে আরেকজন বলেন, বাবাই জীবনের প্রতিটি বাঁকে আমার অদৃশ্য ছায়া হয়ে পাশে থেকেছেন। বাবা দিবস–একটি দিন যাকে ঘিরে অনেক স্মৃতি, কৃতজ্ঞতা আর না বলা ভালোবাসার গল্প।
১৯০৯ সালের আগে বাবা দিবস বলে কোনো বিশেষ দিন ছিল না। ডড বাবার প্রতি ভালোবাসা থেকে বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হন। ডড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার মনে করেন তিনি। তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস। বিশ্বে প্রথম বাবা দিবস উদযাপন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্পোকেনে। ধীরে ধীরে এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এ ধারা শুরু হয় তুলনামূলকভাবে অনেক পরে। বিগত এক দশকে শহরাঞ্চলে এটির প্রভাব লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রথাগত সমাজব্যবস্থায় বাবা পরিবার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গ্রাম থেকে শহর, খেটে খাওয়া মানুষ থেকে চাকরিজীবী–প্রত্যেক বাবার জীবনেই রয়েছে পরিশ্রম, আত্মত্যাগ আর সন্তানের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম।
প্রতি বছর বাবা দিবসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্তানরা বাবার সঙ্গে মুহূর্ত শেয়ার করেন, জানান কৃতজ্ঞতা। বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এই বিশেষ দিবসে সন্তানরা বাবাদের কোনো না কোনো উপহার দিতে পছন্দ করে। বিশ্বের অনেক দেশে ঘটা করে বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। সমাজ, সংস্কৃতি, দেশভেদে উদযাপনে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায়। তবে দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি কিংবা উপহার ভিন্ন হলেও বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসায় নেই কোনো ভিন্নতা। যেখানে প্রকাশভঙ্গি নয়, ভালোবাসা প্রকাশই মুখ্য।