বাবা, তোমার সন্তানরা আজও তোমার জন্য কাঁদে

রাখী সিংহ | বৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

৩রা ডিসেম্বর

এই তারিখটা যেন ক্যালেন্ডারের পাতায় নয়,

আমার বুকের ভেতরেই টাঙানো।

যতবার চোখ খুলে দেখি,

ততবার মনে পড়ে যায়

সেদিনই তুমি গেলে,

ফিরে না আসার দূরদেশে।

সেদিন ভোরটা ছিল

অদ্ভুত নিস্তব্ধ,

কোনো কিছুতেই অশুভ ইঙ্গিত ছিল না।

আমি তখনো জানতাম না

স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠা মানেই

একটা দুঃস্বপ্নের শুরু।

৩ ডিসেম্বর ২০২০

করোনার ভয়াবহ দিনগুলো,

অচেনা সাইরেনের শব্দ,

বন্ধ আকাশপথ, বন্ধ এয়ারপোর্ট

সব মিলিয়ে পৃথিবী যেন

আমাকে তোমার কাছ থেকে

ইচ্ছে করেই দূরে রেখেছিল।

আমি ছুটছিলাম,

মন কাঁদছিল,

হাত বাড়াচ্ছিলাম দূরত্ব পেরোতে

কিন্তু বিধিনিষেধের প্রাচীর

আমার আর তোমার মাঝখানে

দাঁড়িয়ে রইল নীরবে নির্মম হয়ে।

ভাবিনি কখনো

সবশেষ মুহূর্তে

আমি থাকতে পারব না,

তোমার কপালে হাত রাখতে পারব না,

তোমার ঠোঁটের কোণায়

শেষ হাসিটা দেখতেও পারব না।

এই আক্ষেপ, বাবা

চিরজীবন আমার কাঁধে বয়ে বেড়ানো ব্যথা।

সেদিন আকাশ ছিল কেমন জানো?

ধুসর, শূন্য, নিশ্চুপ

যেন তোমাকে বিদায় জানিয়ে

নিজেও দুঃখে কুঁকড়ে ছিল।

আমার ভেতরের পৃথিবীও

সেদিন থেমে গিয়েছিল ঠিক তেমনই

শব্দহীন, আলোহীন।

৩রা ডিসেম্বরের পর থেকে

প্রতিটি বছর, প্রতিটি দিন,

মন কাঁপে এই তারিখটার কাছে গিয়ে।

যেন আবার সেই ভোরটা ফিরে আসে

ঘুম ভাঙে, দুনিয়া বদলে যায়,

আর তোমাকে হারানোর ঘটনা

নতুন করে আমাকে ভেঙে দেয়।

তবু, বাবা, জানো

তুমি নেই বলেই কি

তোমার অস্তিত্ব শূন্য?

না, তুমি আছো

হাওয়ার নরম স্পর্শে,

চোখের কোণায় ভাসা স্মৃতিতে,

অশ্রুর ভিতর জমে থাকা আলোতে।

তুমি নেই শুধু হাসির শব্দে,

পাশে বসা চেয়ারটায়,

আঁচলের ভিতর লুকোনো সুরক্ষায়

কিন্তু তুমি আছো আমার প্রতিটি শ্বাসে।

একটা মেয়ের হৃদয়ে

একটা বাবার থাকার জায়গা

কখনো ফাঁকা হয় না।

আজও ৩রা ডিসেম্বর এলে

আমি থেমে যাই, দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই,

তোমাকে ডাকি, আর নিঃশব্দে বলি

বাবা, তোমাকে ভীষণ মিস করি,

এখনও প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ।’

লেখক : লায়ন প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহের মেয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড. মইনুল ইসলামের কলাম
পরবর্তী নিবন্ধআঞ্চলিক গানের সম্রাট শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব