‘বাবা, তোমার ভাঙা ঘর পাকা করার আগে দেশে আসব না’

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাতকানিয়া | সোমবার , ১ জুলাই, ২০২৪ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

সংসারে সবার মুখে হাসি ফোটাতে চলে যায় সৌদি আরব। দেখতে দেখতে সাত বছর চলে গেল। এর মধ্যে ছেলেকে দেশে আসার জন্য অনেকবার বলেছি। কিন্তু আসেনি। বারবার বলত, বাবা, তোমার ভাঙা ঘর পাকা করার আগে আমি দেশে আসব না। আগে তোমার ঘর পাকা করব। এরপর এসে বিয়ে করব। তোমার ঝুপড়ি ঘরে কেউ মেয়ে বিয়ে দেবে না। এখন আমার ঘর পাকা করা হলো না। হলো না তোমার বিয়ে করা। এর আগেই আমাদের সবাইকে ছেড়ে তুমি চলে গেলে না ফেরার দেশে। আর কোনোদিন ফিরবে না; ফিরতে পারবে না। আমাকে আর বাবা বলে ডাকবে না।’

এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সৌদি আরবের মদিনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাতকানিয়ার মাদার্শা ইউনিয়নের মধ্যম মাদার্শার মিয়ার বর বাড়ির যুবক মো. মহিউদ্দিনের বাবা নুর আহমদ। ছেলে হারানো বাবার এমন কান্না দেখে উপস্থিত সবার চোখে পানি আসে। কেউ কেউ তাকে নানাভাবে সান্ত্ব্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোনো সান্ত্বনায় থামেনি তার কান্না। অবুঝ শিশুর মতো হাউমাউ করে কান্না করে যাচ্ছিলেন। তার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।

কান্না করতে করতে নুর আহমদ জানান, বিদেশে সাত বছর কাটালেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি মহিউদ্দিন। ফলে আমি বারবার বলার পরও দেশে আসেনি। সর্বশেষ যখন দেশে আসতে বলেছিলাম তখন ছেলে আমাকে কথা দিয়েছিল ৬ মাস পর আসবে। তখনো বুঝতে পারিনি মহিউদ্দিন আমাকে ফাঁকি দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যাবে।

তিনি জানান, আমার ভাতিজা তারেককেও নিজের সন্তানের মতো জানতাম। মহিউদ্দিন যেমন আমার সন্তান, তারেক ছিল আমার আরেকটি সন্তান। এক দুর্ঘটনায় আমার দুই সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছি। মানিক জোড়া হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। মহিউদ্দিন ও তারেক চাচাতো ভাই হলেও একে অন্যকে নিজের ভাইয়ের মতো জানত। সৌদি আরবে দুজন একসাথে কাজ করত, একসাথে থাকত। আর দুর্ঘটনায় একসাথে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। এই ব্যথা আমি সইতে পারব না। তাদের আগে আল্লাহ আমাকে নিয়ে গেল না কেন?

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে দরিদ্র কিডনি রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হবে
পরবর্তী নিবন্ধমদিনায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল সাতকানিয়ার দুই ভাই