বাসের ধাক্কায় নিহত বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে মেয়েকে বসতে হয়েছে এসএসসি পরীক্ষায়। মেয়েটির নাম তাসমিন আকতার মিনা। গতকাল বুধবার উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সে পরীক্ষা দিয়েছে। মেয়েটির বাবা গতকাল সকালে পটিয়ার ভেল্লা পাড়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের হরিণতোয়া এলাকার মৃত আমির বকসুর পুত্র ভ্যানচালক আহমদ হোসেন সাতকানিয়ার দস্তিদার হাট থেকে ফার্নিচার নিয়ে নিয়মিত চট্টগ্রাম নগরীতে যেতেন। গত মঙ্গলবার রাতে দস্তিদার হাট থেকে ভ্যানে করে ফার্নিচার নিয়ে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় যান। কিন্তু ফার্নিচারগুলো মালিকের পছন্দ না হওয়ায় পুনরায় ফেরত নিয়ে আসছিলেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া ভেল্লা পাড়া এলাকায় পৌঁছার পর দ্রুতগামী যাত্রীবাহী একটি বাসের ধাক্কায় আহমদ হোসেন গুরুতর আহত হন। এ সময় সাথে থাকা অপর ভ্যানচালকসহ উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে গতকাল সকালে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল আহমদ হোসেনের মেয়ে শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাসমিন আকতার মিনা। এ সময় বাবার মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
নিহত আহমদ হোসেনের পুত্র আনোয়ার হোসেন জানান, সকালে আমার বাবার মৃত্যুর খবর শুনে তাসমিন পরীক্ষা দিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছিল। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। পরে পরিবারের সবাই তাকে অনেক বুঝিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠায়। তাসমিন যখন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিল তখন বাবার লাশ চমেক হাসপাতালে ছিল।
তাসমিন আকতার মিনার সহপাঠীরা জানান, বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে পরীক্ষা দিতে আসা তাসমিন কেন্দ্রে প্রবেশের সময়ও কান্নাকাটি করছিল। আমরা সবাই তাকে নানা ভাবে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ওর কান্না কিছুতেই থামছিল না। চোখের পানি মুছতে মুছতে তাসমিন বলে-‘আজ পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরলে বাবা আমার সাথে দুপুরে ভাত খাবে বলেছিল। আমার সাথে বসে বাবার ভাত খাওয়া হলো না। আর কোনদিন খাবে না। আমাদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে বাবা না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। আমার সাথে বসে বাবার ভাত খাওয়ার শেষ ইচ্ছার কথা আমি কোনো দিন ভুলতে পারবো না।’ এসব কথা বলতে বলতে তাসমিন বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিল।
উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব ফরিদ আহমদ জানান, বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে পরীক্ষা দিতে আসা মেয়েটিকে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা নানাভাবে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। তবে মেয়েটি পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে ফিরেছে।
শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এনামুল হক জানান, তাসমিন আকতার মানবিক বিভাগের ছাত্রী। আজকে তার ভূগোল পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিতে যাওয়া ঠিক আগ মূর্হুতে জানতে পারে বাসের ধাক্কায় তার বাবা মারা গেছে। সবাই অনেক বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছে।