সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রামের আলোচিত যুবলীগ নেতা ও নগরীর ননন্দকানন এলাকার বাসিন্দা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ মামলা দুটি দায়ের করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ–পরিচালক মো. নওশাদ আলী। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপ–পরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বাবরের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে বাবর ৯ লাখ ৯ হাজার ২৫০ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯০ টাকার অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ৭৭ লাখ ৪৪ হাজার ২৪০ টাকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। যা যাচাই করলে দেখা যায়, বাবরের মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪০ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯০ টাকার অবস্থাবর সম্পদ। অর্থাৎ বাবর তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, আয়কর নথি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাবর মোট ২ কোটি ৪ লাখ ২৩ হাজার ৭১৮ টাকা আয় করেছেন। এর মধ্যে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া পেয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ২৭০ টাকা। বাকী ৬২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৮ টাকা আয়ের স্বপক্ষে তিনি কোন প্রমাণ দাখিল করতে পারেন নি। বলা হয়, বাবরের নামে মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। পারিবারিক ব্যয় দেখানো হয়েছে ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এ ব্যয়সহ তার মোট সম্পদ ২ কোটি ৩০ লাখ ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার মোট গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ১ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ২৭০ টাকা। বাকী ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৬০ টাকার সম্পদ তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত। অর্থাৎ বাবর ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৬০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
বাবরের স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে জেসমিন আক্তার ২ কোটি ৩৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪২০ টাকার সম্পদের তথ্য দেন। এর মধ্যে ২ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার ৪২০ টাকার স্থাবর এবং ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ। যাচাই করলে দেখা যায়, স্থাবর ও অস্থাবর মিলে জেসমিনের মোট সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ২৯ হাজার টাকার। বাকী ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৮০ টাকার সম্পদের তথ্য তিনি গোপন করেছেন। এছাড়া জেসমিন আক্তারের আয়কর নথিতে ২০২০ থেকে ২০২২ করবর্ষ পর্যন্ত ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫০০ টাকা আয়ের তথ্য উল্লেখ আছে। এর মধ্যে তার বৈধ বা গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ১২০ টাকা। বাকী ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩৮০ টাকা আয়ের স্বপক্ষে তিনি কোন প্রমাণ দাখিল করতে পারেন নি।
এজাহারে বলা হয়, জেসমিন আক্তার আয়কর নথিতে পারিবারিক ব্যয় দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এ ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। এর মধ্যে গ্রহণযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ১২০ টাকার। বাকী ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ৮৮০ টাকা তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ। অর্থাৎ জেসমিন আক্তার মোট ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ৮৮০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, জেসমনি আক্তার তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ গড়েছেন মূলত তার স্বামী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের সহযোগীতায়।