সবকিছুর মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেও চলছে অস্থিরতা। বেশ কয়দিন ধরেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এবং নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের পদত্যাগের দাবি উঠছে। তাদের পদত্যাগ চেয়ে মানববন্ধন করে বাংলাদেশের ফুটবলের সমর্থকগোষ্ঠী ‘বাংলাদেশি ফুটবল আল্ট্রাস’। এরপর তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন সংগঠন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বাফুফে ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন সাবেক ও বর্তমান নারী ফুটবলাররা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনের চার তলায় নারী ফুটবলারদের স্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানেই থাকেন নারী ফুটবলাররা। এই ক্যাম্পকে বন্দিশালার সঙ্গে তুলনা করলেন সাবেক অধিনায়ক ডালিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘বাফুফে ভবনের চারতলায় মেয়েদের রাখা হয়েছে, এটা যেন কনডেমড সেল। মেয়েরা কী খাচ্ছে, জানতে দেওয়া হয় না। মেয়েদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। এই মেয়েরা একদিন এই ভবন থেকে বের হয়ে হয়তো সত্যটা প্রকাশ করবে।’ ‘বাফুফের ক্যাম্পে থাকা এরা ছোট ছোট মেয়ে। আওয়াজ তুলতে ভয় পায়। এক মেয়ে বলেছিল, বারবার কেন পাঙাশ মাছ খাওয়ানো হয়? এটা বলার কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ভুল ইতিহাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সত্য ঢাকা যায় না। একদিন তা বেরিয়ে আসে।’ বাফুফেতে স্বৈরশাসন চলছে বলে মনে করেন ডালিয়া। তার মতে কিরণ এবং সালাউদ্দিন নারী ফুটবলারদের ওপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছেন। ডালিয়া বলেন, ‘তারা সব কুক্ষিগত করে রেখেছে। আপনি (কিরণ) চুরি ছাড়া আর কিছু করেননি। আপনি ভালোবাসেন আপনার চেয়ার। অলিম্পিক বাছাই খেলতে পাঠানো হয়নি আমাদের মেয়েদের। কত টাকা মেরে খেয়েছেন? এবার পদ থেকে সরে যান। জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক থাকার পরও আমাকে নারী ফুটবলের কোথাও রাখা হয়নি।’ বাংলাদেশ নারী ফুটবলের অন্যতম সংগঠক কামরুন নাহার ডানা ছিলেন এই মানববন্ধনের কেন্দ্রবিন্দুতে।
দেশের নারী ফুটবলের যাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। শক্ত অবস্থান নিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন নারী ফুটবলকে। গতকাল বাফুফে ভবনের সামনে সভাপতি এবং নারী উইংয়ের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে সোচ্চার ছিলেন সাবেক এই ব্যাডমিন্টন তারকা। দুর্নীতিমুক্ত করে বাফুফেকে নতুন নেতৃত্বে এগিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেছেন তারা। ডানা বলেন, ‘ফুটবল ফেডারেশন যেন সালাউদ্দিন–কিরণের ফেডারেশন। এটাকে তারা নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছেন। উনি (সালাউদ্দিন) নিজের স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজ করেননি। বাফুফেতে রাজনীতিকরণ হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে। বাফুফের নির্বাচনে যারা কাউন্সিলর হয়েছেন, তারা আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যারা পালিয়ে বেড়ায়, তারা যেন ক্রীড়াঙ্গনে না আসে। আমরা ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থে পরিবর্তন চাই। আমরা আশা করব, বাফুফেকে ঢেলে সাজানো হবে। দুর্নীতিমুক্তভাবে দেশের ফুটবল এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের চাওয়া।’