বাপের বাড়ি থেকে ছাগল দেওয়ায় অপমান, গৃহবধূর আত্মহত্যা

হাটহাজারী প্রতিনিধি | সোমবার , ৩ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

কোরবানির ঈদে বাপের বাড়ি থেকে গরু উপহার না দিয়ে ছাগল দেওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন সুমি আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধূ। গত বৃহস্পতিবার কোরবানির দিন দিবাগত রাতে হাটহাজারীতে শ্বশুরবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছে মেয়ের পরিবার। এলাকাবাসী থানা পুলিশকে জানালে শুক্রবার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। একই দিন ময়না তদন্ত শেষে লাশ সন্ধ্যার দিকে তার বাপের বাড়ি গুমানমর্দ্দন এনে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ঘটনার পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের পিতা মো. সিরাজ (৫০) বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে গত শনিবার থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, হাটহাজারীর ৪ নং গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের আশরাফ আলীর বাড়ির মো. সিরাজের ১ম কন্যা সুমি আক্তারের (১৯) সাথে গত বছরের ২২ জুলাই পার্শ্ববর্তী ৩ নং মির্জাপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাচা মিয়া বাড়ির মো. ফরিদ মিয়ার ১ম পুত্র মো. তাজুল ইসলামে বিয়ে হয়। তিনি কাতার প্রবাসী। বিয়ের পর দুই মাস মোটামুটি ভালো ছিল। এরপর স্বামী প্রবাসে চলে গেলে তার মেয়ের সাথে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। কোরবানির ঈদে গরু উপহার দেওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েকে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই গত বুধবার মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে ১২ হাজার ৫শ টাকায় একটি ছাগল এবং রান্নার আনুষাঙ্গিক দ্রব্য মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে পাঠানো হয়। বাপের বাড়ি থেকে ছাগল পাওয়ার পর থেকে মেয়ের সাথে অশোভন আচরণ করতে থাকে মেয়ের দেবর মো. সাহেদ (২০), শ্বশুর ফরিদ মিয়া (৫৫) ও শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম (৪৫)। কোরবানির দিন উপহারের ছাগলটি জবাই করে রান্না করা মাংস বেয়াই ফরিদ মিয়া মেয়ের বাপের বাড়িতে নিয়ে যায়। অবশিষ্ট মাংস মেয়ের সামনে ১ নং আসামি মেয়ের দেবর মো. সাহেদ পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয়। কোরবানির দিন দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে বাদীর মেয়ে সুমি ঘটনার বিষয় তাকে এবং তার মা মিলা আক্তারকে (৩৬) জানায়।

বাদীর মেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্ষেপ করে বলে, আমাকে জল্লাদের পরিবারের কাছে বিয়ে না দিয়ে গলা টিপে মেরে ফেলে দিলে ভালো হতো। এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক পরে মামলার ১ নং বিবাদী মোবাইল ফোনে তার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে জানায়। তাকে সরকারহাট বাজারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসতে বলে। আমি হাসপাতালে এসে মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।

ঘটনার পর থেকে মামলার আসামিরা পলাতক রয়েছে। এমনকি ১ নং আসামির মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। ঘটনার বিষয় জানতে ফোন করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এই ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনা তদন্তের জন্য একজন উপপরিদর্শককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাটগাঁইয়া ‘রসম’ এবং একটি অভিনব প্রতিবাদ
পরবর্তী নিবন্ধকোরবানি দাতা কম, পূরণ হয়নি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা