বান্দরবানে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলি, আতঙ্কে সীমান্তবাসী

বান্দরবান প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৭:৪৩ অপরাহ্ণ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে আহত হয়েছে বাংলাদেশী এক যুবক। আহত অবস্থায় তাকে কক্সবাজার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আহত যুবকের নাম অন্ন্যাথাইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২)।

ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফের গোলাগুলি এবং মর্টারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা ঘটে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু হেডম্যান পাড়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তের ৩৫ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে কাঁটা তারের বেড়ার কাছাকাছি গেলে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়।

এতে বাংলাদেশী যুবকটির একটি পায়ের নিচের অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়ে যায়। তার বাড়ি সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়ায়। খবর পেয়ে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত যুবককে উদ্ধার করে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, “সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশী নাগরিক এক যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের নয়টি পয়েন্টে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী মাটির নিচে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করে রেখেছে। ইতিপূর্বেও ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বিশজনের অধিক বাংলাদেশী এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত যুবক মিয়ানমার সীমান্ত পথে গরু চোলাচালান চক্রের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে শুনেছি।”

শুক্রবার সীমান্তের ওপারে ফের মর্টারশেল নিক্ষেপ এবং গোলাগুলি শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে তুমব্রু এলাকায় গোলাগুলি এবং মর্টারশেল নিক্ষেপের শব্দ ভেসে আসছে। এপারে বসবাসরত বাংলাদেশী সীমান্তবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে।

ঘুমধুম মৌজা হেডম্যান তানিসা প্রু তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু-আমতলী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি(এএ)-এর সশস্ত্র সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলি ফের শুরু হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকেই মর্টারশেল নিক্ষেপের বিকট শব্দ ভেসে আসছে বাংলাদেশেও। মিয়ারমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনী এবং সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে চলমান সংঘাতে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশীদের মধ্যেও এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সীমান্তের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষজন।

তবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও সরকারের দায়িত্বশীল কোনো সংস্থার কোনো ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে, সীমান্তবাসীদের দাবি, ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম-তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু-আমতলী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পাহাড়ি এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় সংগঠনটির সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধংস করতেই মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী মর্টারশেল নিক্ষেপ এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে।

মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান এবং ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকেও গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দু’দফায় মর্টারশেল এবং যুদ্ধ বিমান থেকে নিক্ষেপ করা গোলা উড়ে এসে পড়ে বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম তুমব্রু এলাকায়। ভারী অস্ত্রশস্ত্রের গুলিও উড়ে এসে পড়েছিল তুমব্রু সীমান্তের জনবসতি এলাকায়।

শুক্রবার ফের শুরু হওয়া সংঘাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সীমান্তবাসী। সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে চাষাবাদ করা বাংলাদেশী কৃষকরা যেতে পারছে না চাষের জমিতে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজও থমকে গেছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সাংবাদিকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধবিড়ালগুলোর চোখে চশমা, গলায় ঘণ্টা