বান্দরবানের রুমায় গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নে সামাজিক কুসংস্কারকে কেন্দ্র করে তাবিজ-কবচের অভিযোগে পাড়াবাসীর হামলায় পাড়া প্রধান কার্বারী সহ পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত পাড়া প্রধান হলেন বোমাং সার্কেলের আবুপাড়া কার্বারী লরুই ম্রো। অন্যরা হচ্ছেন কার্বারীর ছেলে রুমথুই ম্রো, লেংঙিন ম্রো, মেন ওয়াই ম্রো এবং রিংরাও ম্রো।
তবে বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম পাহাড়ি জনপদে সংঘটিত ঘটনাটি জানাজানি হয়েছে প্রায় তেরঘন্টা পর আজ শুক্রবার(২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে। হত্যাকাণ্ডের পিছনে অজানা অনেক ধরনের রহস্য রয়েছে বলেও ধারণা স্থানীয়দের।
আইনশৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, রুমা উপজেলার গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম আবুপাড়া এলাকায় কুসংস্কারকে কেন্দ্র করে তাবিজ-কবচ করে পাড়াবাসীদের হত্যার অভিযোগে উঠে বোমাং সার্কেলের পাড়া প্রধান কার্বারীর পরিবারের বিরুদ্ধে। জাদুটোনা করে তাবিজ-কবচের ঘটনায় পাড়াবাসী মারা যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে পাড়াবাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে পাড়াবাসী বৈঠক করে কার্বারীর পরিবারের ওপরে হামলা চালায়। এতে কার্বারী সহ পরিবারের ৫ জনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু হয়। ঘটনার খবর পেয়ে রুমা জোনের সেনাবাহিনী, পুলিশ সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বোমাং সার্কেলের মৌজা হেডম্যান মেনরথ ম্রো জানান, পাড়াবাসীর অভিযোগ পাড়ার প্রধান কার্বারীর পরিবার পাড়ার লোকজনের উপর জাদুটোনা করছিল। তাবিজ-কবচের কারণে পাড়ার লোকজন মারা যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে পাড়াতে। তাবিজ-কবচের অভিযোগে কুসংস্কারকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীরা পাড়া প্রধানের পরিবারের ওপরে হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পাড়া প্রধান কার্বারী সহ একই পরিবারের ৫ জনকে হত্যা করে তারা।
স্থানীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাড়া কার্বারীর পরিবারের বিরুদ্ধে পাড়ার লোকজনদের তাবিজ-কবচ করে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। কার্বারী পরিবারের জাদুটোনার কারণে পাড়ার লোকজন মারা যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি জুম চাষ নিয়েও কার্বারীর পরিবারের সাথে পাড়াবাসীর বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ নিয়ে পাড়াবাসী বৈঠক করে কার্বারী পরিবারের ওপরে হামলা চালিয়েছে। হত্যাকান্ডের পিছনে আরও রহস্য থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরীন আখতার বলেন, “কার্বারীসহ ৫ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। দুর্গম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় আগেরদিন রাতের ঘটনাটি শুক্রবার জেনে ঘটনাস্থলে পুলিশের দু’টি টিম পাঠানো হয়েছে। কার্বারীর পরিবারের সাথে পাড়াবাসীর বিরোধের জের ধরে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন মারা গেছে বলে জেনেছি।”