বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে জৈব কেঁচো সার উৎপাদন এবং জমিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। স্বল্প পুঁজিতে উৎপাদিত জৈব সার এবং কেঁচো বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা ফিরেছে অনেক কৃষক পরিবারে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবান সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোয়ালিখোলা, দক্ষিণ গোয়ালিখোলা, রোয়াজো পাড়াসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে দুই শতাধিক পাহাড়ি–বাঙ্গালি কৃষক পরিবার নিজের বাড়িতে জৈব কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়িতেই দুই চারটি করে গরু রয়েছে। এই গরুগুলোর গোবর, ছোটছোট টুকরো করা কলাগাছ, কচুরিপানা এবং কেঁচো দিয়ে জৈব সার বা কেচোঁ সার উৎপাদন করা হচ্ছে। সার তৈরির প্রতিটি পাত্রে খরচ পড়ে ৫০ টাকা। চল্লিশ দিন পরপর প্রতিটি পাত্রে ২ মণ করে জৈব সার তৈরি হয়। প্রতি কেজি জৈব কেঁচো সার বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকায়। প্রতি বস্তা গোবর ১০০ টাকা এবং প্রতি কেজি কেঁচো দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
গোয়ালিখোলার চাষি আবুল বশর জানান, দুই মাস অন্তর তার খামারে ৩৫টি পাত্র থেকে উৎপাদিত হয় এক হাজার কেজি কেঁচো সার এবং কেঁচো বিক্রি করে কয়েক লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। উৎপাদিত সার ষোল টাকা কেজি এবং প্রতি কেজি কেচোঁ দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, এই আয় দিয়ে আমার সংসার, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলে। এছাড়াও নিজেদের জমিতে ফসল চাষাবাদেও ব্যবহার করা হচ্ছে উৎপাদিত জৈব সার।
রোয়াজো পাড়ার চাষি উনুমং মারমা ও হ্লানুমং মারমা বলেন, স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের বাড়িতে বড় পাত্রে জৈব কেঁচো সার উৎপাদন করি। নিজেদের জমিতে ফসল চাষাবাদে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে উৎপাদিত জৈব সার ব্যবহার করি। বাড়তি সারগুলো ১৬ টাকা কেজিতে আশপাশের কৃষকরা নিয়ে যায়। এই অঞ্চলগুলোতে জৈব সারের উৎপাদন এবং জমিতে ফসল উৎপাদনে ব্যবহার বেড়েছে। জৈব সার উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা ফিরেছে ইউনিয়নের অনেক পরিবারে।
বান্দরবান হর্টিকালচারের উপ–পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুর রশিদ বলেন, জৈব সার বা কেঁচো সার মাটির পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে। জৈব সারের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বেড়েছে। এই অঞ্চলে শস্য উৎপাদনেও বেড়েছে জৈব সারের ব্যবহার। হর্টিকালচারের চারা উৎপাদন এবং বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব কেঁচোর সার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে।