বান্দরবানে পাহাড়ের অরণ্যে কবরস্থ জঙ্গির মৃতদেহ উধাও

বান্দরবান প্রতিনিধি | সোমবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ২:২৬ অপরাহ্ণ

বান্দরবানের রুমায় পাহাড়ের অরণ্যে কবর খুঁড়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। মৃতদেহ মাটি খুঁড়ে কে বা কারা নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে র‍্যাব। মৃত ব্যক্তির নাম আলামিন। তার বাড়ি কুমিল্লার হালিমা নগরে, পিতার নাম মো. নূরুল ইসলাম।

গতকাল রবিবার মৃতদেহ উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজের মরদেহ পাওয়া যায়নি।

আইনশৃংখলা বাহিনী জানায়, নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার কর্মকাণ্ডে উদ্ভুদ্ধ হয়ে ঘরছাড়া ৫৫ জন যুবক পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি সীমান্তবর্তী পাহাড়ের গহীন অরণ্যে বিভিন্ন সময়ে পৃথক পৃথকভাবে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাসনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) অর্থের বিনিময়ে ভারী অস্ত্র চালানো, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি সহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া কয়েকজন জঙ্গির নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ঘটে। এসময় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দে এক জঙ্গি হত্যা করে পাহাড়ের নিচে মাটিতে কবর দেয়া হয় বলে গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গি রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দেয়।

তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে গত শুক্রবার গ্রেফতার দুই জঙ্গিকে নিয়ে যৌথ বাহিনী এবং পুলিশের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কবরের সন্ধ্যান পায়।

গতকাল রবিবার সকালে পুনরায় যৌথ বাহিনী এবং পুলিশের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নোমান সিবলি হেলিকপ্টারযোগে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত মাটির নিচে কবর খুঁড়ে দেখেন জঙ্গির মরদেহ উধাও। তবে কবর খুঁড়ে জঙ্গির মৃতদেহ মোড়ানো কম্বল সহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে।

জঙ্গির পিতা কুমিল্লার হালিমা নগরের বাসিন্দা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, “আমার সন্তানকে যারা ভুলপথে উদ্বুদ্ধ করেছে তাদের বিচার চাই। কবরে আমার সন্তানের মৃতদেহ নেই কিন্তু কবরে পাওয়া কাপড়-চোপড়সহ বিভিন্ন আলামত দেখে তার বলে শনাক্ত করা হয়।”

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, অভ্যন্তরীণ মতবিরোধে অক্টোবর মাসে এক জঙ্গিকে হত্যার পর পাহাড়ের অরণ্যে কবর দেয়ার তথ্যটি রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গত ১১ জানুয়ারি থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের দু’জন। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনাস্থলে গিয়ে কবরে মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। তবে মৃতদেহের বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে কবরে।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “নতুন জঙ্গি সংগঠনে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘরছাড়া ৫৫ জন যুবক পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাসনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর সহযোগিতায় পাহাড়ে গোপন আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের মধ্যে গত ১১ জানুয়ারি অভিযানে রোয়াংছড়ি থেকে ২ জন এবং থানচি থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক অভ্যন্তরীণ মতবিরোধে হত্যা করা এক জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধারে পাহাড়ের গহীন অরণ্যে অভিযান চালায় কিন্তু জঙ্গির মৃতদেহ কবর থেকে কে বা কারা নিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেয়া ১২ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ’র ১৪ জন সদস্যকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। রাঙামাটি থানায় দায়ের করা জঙ্গি মামলায় অভিযুক্ত আসামী তারা।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধবে টার্মিনালে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর : নৌ প্রতিমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধনেপালে বিমান দুর্ঘটনা : মৃত্যুর আগে যাত্রীর ফেসবুক লাইভ ভাইরাল