বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে। আজ বৃহস্পতি ও আগামীকাল শুক্রবার দু‘দিন ব্যাপী সীমিত পরিসরে উৎসব আয়োজন করেছে উদযাপন কমিটি। এবারের আয়োজনে সূচি থেকে বাদ পড়েছে মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পিঠা তৈরি উৎসব। গৌতম বুদ্ধের স্মরণে ফানুসও উড়ানো হবে সীমিত পরিসরে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে এবার সীমিত পরিসরে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিবছর চার দিনব্যাপী ঝাঁকঝমক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও এবার সীমিত পরিসরে দু‘দিন পালন করা হবে।
এদিকে তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের পর পাহাড়ি মারমা সমপ্রদায়ের লোকজন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। প্রচলিত আছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তাঁর মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমার এই তিথিতে আকাশে উড়ানো হয় শত শত ফানুস। ফানুস উড়ানোর সময় পাহাড়িরা মারমা ভাষায় ‘সাও দো’, ‘সাও দো’ বলতে থাকে। যার অর্থাৎ শুভ মুক্তি।
মারমা সমপ্রদায়ের শিক্ষার্থী সাথুয়াই ও তরুণী মিলি প্রু বলেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে অনুষ্ঠানমালা কাটছাটে উৎসবের আমেজ কিছুটা কমেছে। দলবদ্ধ ভাবে রাতব্যাপী পিঠা তৈরি, নতুন পোশাক পড়ে প্রতিবেশিদের বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের পিঠা বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হাজার প্রদ্বীপ প্রজ্বলনের মত কর্মসূচি বাদ দেয়া হয়েছে শুনেছি। তারপরও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সীমিত পরিসরে গৌতম বুদ্ধের স্মরণে আকাশে ফানুস উড়ানো এবং মঙ্গল রথযাত্রা অনুষ্ঠানে আনন্দে মেতে উঠবে পাহাড়ের মানুষ। ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসব হয়ে উঠুক পাহাড়ে ঐক্যের মেলবন্ধন।
উৎসব উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক লুবু প্রু মারমা জানান, বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের বিকেল পাচটায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের মূল আকর্ষণ পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে তৈরি করা মঙ্গলরথ রথে বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করে রথ‘টি ঐতিহ্যবাহী রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত আসাংম্রাইকে (গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে) বন্দনা করার উদ্দেশ্যে নেয়া হবে। পরে সেখানে বন্দনা শেষে উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত পদমুং আসাংকে বন্দনা করার উদ্দেশ্যে নেয়া হবে। পুনরায় পুরাতন রাজবাড়িতে ফেরত নিয়ে আসা হবে। শুক্রবার বিকালে পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে তৈরি করা রথের ওপর একটি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করে রথটি পুরো শহর ঘুরানো হবে। এ সময় বৌদ্ধ ধর্মের নর–নারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বুদ্ধ মূর্তিকে। রাতের এ রথযাত্রা দেখতে রাস্তার দুই পাশে উপচেপড়া ভিড় জমে। এ প্রসঙ্গে বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবকে ঘিরে পাহাড়জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উৎসব স্থলে সার্বক্ষণিক পুলিশ নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি সাদা পোশাকে ভ্রাম্যমাণ টহল টিম থাকবে।