কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামায় প্রথমবারের মতো নির্মিতব্য শেখ হাসিনা বানৌজা সাবমেরিন ঘাঁটিতে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বর্তমান বিদ্যমান চকরিয়ার বরইতলী একতাবাজার থেকে মগনামা পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটার সড়ককে ১০ দশমিক ৩ পয়েন্টে উন্নীত করা হবে। তিন প্যাকেজে এই সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হবে আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে। সড়কটির বর্তমান প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ পয়েন্ট থেকে ১০ দশমিক ৩ পয়েন্ট উন্নীতের কাজ শেষ হলে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়কটির নতুন করে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘একতা বাজার হতে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি’ সংযোগ সড়ক। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬১ কোটি টাকা।
গতকাল রবিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়কটির নির্মাণকাজের ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন ও কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
এসময় ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ হওয়ায় কক্সবাজারের সুনীল সমুদ্র অবলোকনের দৃশ্যপটই পাল্টে দিয়েছে। এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক পাল্টে দিয়েছে সেখানকার মানুষের জীবনযাপনও। এরইমধ্যে মেরিন ড্রাইভ ঘিরে মহাসড়ক সম্প্রসারণেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রামুর ফঁতেখারকুল, উখিয়ার মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। কক্সবাজার লিংক রোড থেকে লাবণী মোড় পর্যন্ত চারলেনের মহাসড়কের কাজও সহসা শেষ হবে।
এ উপলক্ষে পেকুয়া স্টেডিয়ামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের এমপি ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ হতে সরবরাহকৃত তথ্য থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে পশ্চিমে চলমান একতা বাজার-পহরচাঁদা-মগনামাঘাঁট-বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি জেলা মহাসড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পের আওতায় ১ কিলোমিটার হতে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কাংশ প্রশস্থকরণ, ৬ কিলোমিটার হতে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কাংশের পেভমেন্ট উঁচুকরণ, প্রশস্থতকরণ ও শক্তিশালীকরণ। আবার ২০ কিলোমিটার থেকে ২৩ কিলোমিটার পর্যন্ত নতুন করে সড়ক নির্মাণ করা হবে। নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত সড়কাংশ সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনাতে’ যাতায়াতের জন্য একমাত্র সড়ক এবং যা বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়িবাঁধ।
সরবরাহকৃত তথ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সড়কটি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার জনসাধারণের যাতায়াতের এবং চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ায় উৎপাদিত লবণ এবং আহরিত চিংড়ি ও সামুদ্রিক সম্পদ দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহনের জন্য ব্যবহার হবে। এছাড়া মগনামা ঘাঁট হতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটিতে যাতায়াত একেবারে সহজ হবে। এতে উপকৃত হবেন উপকূলীয় এলাকার অন্তত ১০ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠি।
প্রকল্পের প্রধান অঙ্গসমূহ হলো- ২ দশমিক ৮৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। সড়ক বাঁধে মাটির কাজ করা হবে ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭৮ দশমিক ৬৮ ঘনমিটার। ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নির্মাণ করা হবে নতুন পেভমেন্ট। প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পায় ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন পায় চলতি বছরের গত ৫ নভেম্বর। নির্মাণকাজ শেষ হবে আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা গতরাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিদ্যমান পুরোনো সড়কটিই প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। দুই লেনের বাইরেও এই সড়কের বিভিন্ন অংশে নির্মাণ করা হবে ছোট ছোট সার্ভিস লেনও। যাতে লোকাল গাড়িগুলোও ওয়ানওয়ে চলতে পারে। পানি চলাচলের জন্যও সড়কটিতে থাকবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘৩৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাওয়া এই সড়কটিই হয়ে উঠবে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর মানুষের অর্থনীতির চাকা সচলের। একইসাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে মগনামায় দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি তথা ‘বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটিতে’ যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হবে এই সড়কটি। এটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে সম্ভাবনার দুয়ার অবারিত হবে।’