সরকার নিষিদ্ধ করলেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল বন্ধ করতে পারছে না। সিডিএ আনসার নিয়োগ দিয়েছে, পুলিশকে চিঠি দিয়েছে কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে এক্সপ্রেসওয়েতে দোর্দন্ড প্রতাপে চলছে মোটর বাইকের তীব্র ‘গতি প্রতিযোগিতা’। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজনকে মারধর করে বাইক নিয়ে উল্টাপথে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে যাওয়ার ঘটনা প্রাত্যহিক। প্রতিদিনই বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে রাত অব্দি নিরাপত্তাবলয় ভেঙে শত শত মোটর বাইক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পড়ে। আগ্রাবাদ থেকে বারিকবিল্ডিং মোড় পর্যন্ত এলাকায় শত শত বাইকার দাঁড়িয়ে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালায় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও বাইকারদের মধ্যে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নগরীর যান চলাচলে গতিশীলতা আনতে নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। ৪ হাজার ২শ’ ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ বেশ আগে শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক যান চলাচল। টোল আদায় কার্যক্রম শুরু করার মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে পুরোদমে গাড়ি চলাচল শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ইতোমধ্যে মোটর সাইকেল এবং কন্টেনার ট্রেইলর নিষিদ্ধ করে টোল আদায়ের অনুমোদন দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের অনুমোদন দেয়া হলেও মোটর সাইকেল ও কন্টেনার মুভার নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। সূত্র বলছে, ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সরকার মোটর সাইকেল বন্ধ রাখার কথা থাকলেও বাইকারদের আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। মোটর সাইকেল ঠেকানোর জন্য সিডিএ আনসার নিয়োগ দিয়েছে। রয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজনও। কিন্তু নিরাপত্তার বাধা উপেক্ষা করে প্রতিদিন শত শত মোটর সাইকেল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করে। সংশ্লিষ্ট একজন আনসার সদস্য বলেছেন, আমরা পতেঙ্গা টানেল রোডে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল, লালখান বাজার এবং ওয়াসা মোড় এলাকায় আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল এই তিনটি পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করি। আমরা মোটর সাইকেল আসলে তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠায়। এক্সপ্রেসওয়েতে নিষিদ্ধ বলার পর কেউ কেউ ফেরত গেলেও অধিকাংশ বাইকারই এগ্রেসিভ হয়ে ওঠে। তারা আমাদের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজনকে ধাক্কা দিয়ে এবং বেষ্টনী ভেদ করে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পড়ে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামান গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, মোটর সাইকেল নিয়ে আমরা বিপদে আছি। সরকার এ পথে মোটর সাইকেল নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু মোটর সাইকেল চালকেরা এই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। তারা জোর করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যায় নগরীর লালখান বাজার এলাকায় উল্টা দিক থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল তোলার চেষ্টা করছিলেন কয়েকজন। তাদেরকে বাধা দেয়া হলে তারা আমাদের সিকিউরিটি সুপারভাইজার সামশুদ্দীনকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন এবং জোর করে উল্টা পথে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পতেঙ্গার দিকে চলে যান।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা দৈনিক আজাদীকে জানান, এক্সপ্রেসওয়ের আগ্রাবাদ থেকে বারিকবিল্ডিং মোড় পর্যন্ত এলাকাটি অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া হয়ে উঠেছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে এখানে শত শত বাইকার জড়ো হয়ে নানা ধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে। এদেরকে কোনভাবেই দমানো যাচ্ছে না বলেও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা স্বীকার করেন।
তারা বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় দুইজন মানুষ মর্মান্তিকভাবে মারা গেলেও বাইকারদের মধ্যে তার কোন প্রভাব পড়েনি। প্রতিরাতেই অসংখ্য বাইকার এক্সপ্রেসওয়েতে রেসিং শুরু করেন। তারা বিকট শব্দে এবং তীব্র গতিতে বাইক চালিয়ে পুরো এক্সপ্রেসওয়েকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলছেন।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ কারো নেই। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মোটর সাইকেল চালকেরা মানছেন না। তাদের কোনোভাবেই আটকানো যায় না বলে উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের উপর তারা হামলা করতেও পিছপা হচ্ছেন না। বিষয়টি দুঃখজনক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।