বাদশা

আনোয়ারুল ইসলাম | বুধবার , ১২ মার্চ, ২০২৫ at ১২:০২ অপরাহ্ণ

মস্ত বড়ো পুকুর। পুকুরের উত্তর দিকে ঐতিহ্যবাহী সরদার বাড়ি আর দক্ষিণে দ্বিতল মসজিদ। এই মসজিদে থাকে জ্বীন।জ্বীনদের মধ্যে একজন সরদার আছে। সবাই তাকে সম্মান করে জ্বীনের বাদশা বলে ডাকে। এই গ্রামে মিন্টুদের বাড়ি। গ্রামের মধ্যে মিন্টু, খলু ও জলু খুবই দুষ্টু। এরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে নানান অপকর্ম করে থাকে। আম বাগানের আম চুরি থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ পর্যন্ত দিন দুপুরে চুরি করে। চুরির জন্য তাঁরা অন্য ছেলেদের সাথে নেয় না।তাঁরা তিন জনই এসব করে থাকে। মিন্টু অতি চালাক আর খলু ও জলু চালাক না হলেও ততোটা বোকা নয়। সরদার বাড়ির পুকুরের পশ্চিমে অনেক বড়ো সুপারির বাগান। সুপারি পেকে লাল হয়ে গেছে। সরদার বাড়ির সরণ মাঝে মধ্যে ওদের সাথে যোগ দেয়। চাঁদনী রাত।দিনের মতো ফুট ফুটে আলো। সরণের কাছে সিগারেট কেনার টাকা নেই। রাতের খাবার খেয়ে মর্জিনার মোড়ে টংয়ে বসে মিন্টুূদের জন্য অপেক্ষা করছে।কখন তাঁরা টংয়ে আসবে । ঘন্টা খানেক পর ওরা ৩ জন টংয়ে এল।সিদ্ধান্ত হলো আজ পুকুর পাড়ের পাকা সুপারি চুরি করবে। শর্ত হলো, চার ভাগের তিন ভাগ মিন্টুদের আর এক ভাগ সরণের। মিন্টু চুরিতে ও গাছে উঠতে পারদর্শী। তাই সবার অনুরোধে মিন্টু গাছে উঠলো। কাঁচি দিয়ে কেটে দড়িতে বেঁধে সুপারির ছড়ি নীচে নামাচ্ছে। সবাই তাকে সহযোগিতা করছে। চাঁদনী রাতে হঠাৎ অন্ধকার নেমে এলো। কিছুই দেখা যায়না। ঝড়ের গতিতে বাতাস এলো। তবুও চলছে চুরির কাজ।এমন সময় জ্বীনের বাদশা সুপারির গাছের নীচে হাজির।জ্বীনের বাদশাকে দেখে গাছের নীচে থাকা সবাই দৌড়ে পালিয়ে গেল।তখনও মিন্টু কিছুই বুঝতে পারেনি। জ্বীনের বাদশা কর্কশ গলায় বলল, ‘কে সুপারির গাছে?

—–মি—-ভয়ে ভয়ে বলল মিন্টু।

কে তুমি? জোর গলায় বলল জ্বীনের বাদশা।

মিন্টু।

তুমি গাছে কেন?

সুপারি পাড়ছি।

তোমাদের গাছ?

না

তাহলে সুপারি পাড়ছ কেন?

সরণ বলেছে

চুরি করতে বলেছে?

না

সরণ বলেছে বলে তোমরা অন্যের জিনিস চুরি করবে?

না,ভূল হয়েছে। আর চুরি করবো না।

আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি গাছ থেকে নেমে এসো।

মিন্টু আর দেরি না করে তৎক্ষনাৎ গাছ থেকে নামলো। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।এদিক সেদিক দেখে দৌড় দেয়ার মনোভাব করলে জ্বীনের বাদশা বলল,একটি পাও তুলতে পারবে না।যদি দৌড় দেয়ার চেষ্টা কর তাহলে গলা টিপে মেরে ফেলবো।

আচ্ছা, ঠিক আছে। পালাবো না কাঁপতে কাঁপতে বলল মিন্টু।

তুমি যদি একটি কথা শোন তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেব।

বলুন, আমি তাই করবো।

তুমি আমাকে চিন?

না,চিনি না।

আমি জ্বীনের বাদশা। এই মসজিদে থাকি।এই গ্রাম পাহারা দেই।কেউ যাতে চুরি করতে না পারে।

আমরা তো জানতাম না,আপনি এই গ্রাম পাহারা দেন।

আজ এই যে জানিয়ে দিলাম। এর পর যেন এ রকম না হয়।

আচ্ছা, ঠিক আছে, আর আমরা চুরি করবো না।আজকে মাফ করে দিন।

ঠিক আছে, আজ তো মাফ করবো কিন্তু ওদের ডেকে নিয়ে এসো।নইলে কেউ ছাড় পাবে না।

তৎক্ষনাৎ মিন্টু ওদের ডেকে আনল।পুকুর পাড়ে শান বাঁধানো গোসলের ঘাট আছে। সেই ঘাটে বসলো সবাই। জ্বীনের বাদশা ওদের অনেক ভালো ভালো উপদেশ দিল।উপদেশ শুনে সকলে খুশি হলো। পরদিন থেকে সকলে স্কুলে যেতে লাগলো। চুরির চিন্তা আর মাথায় আসে না। জ্বীনের বাদশা মাঝে মাঝে মানুষের বেশে ওদের খোঁজ খবর নেয়। আর তারা চুরি করে না।পড়ার সময় পড়ে, খেলার সময় খেলে। সেই থেকে গ্রামে আর চুরি হয় না বললেই চলে। গ্রামবাসী সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে লাগলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবা ং লা দে শে র ফ ল
পরবর্তী নিবন্ধধর্ষণের বিচার চেয়ে চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল