বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লী জাং কেউন বলেছেন, বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশি প্রায় ৯৫ শতাংশ পণ্য কোরিয়ান বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (ওডিএ) গ্রহণকারী দেশ। তবে আগামী দিনগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উভয় দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিকভাবে সম্পর্ক আরো উন্নয়ন করতে পারে। আগামী বছর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হবে। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ, যার পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ৩৫০ মিলিয়নের কম। পক্ষান্তরে, কোরিয়া থেকে আমদানি প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। কাজেই এই বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কোরিয়া প্রায় ১২ থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে কোরিয়াতে রপ্তানি হয় মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। কাজেই আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে রুলস অব অরিজিন সহজিকরণ, প্রধান আমদানিকারকদের সাথে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের যোগাযোগ স্থাপন এবং যৌথ উদ্যোগে আরএমজি ও টেক্সটাইল খাতে কারখানা স্থাপন করে কোরিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, চট্টগ্রামে যৌথভাবে উন্নতমানের পণ্য উদ্ভাবনে চট্টগ্রামে কোরিয়া-বাংলাদেশ ইনোভেটিভ সেন্টার স্থাপন করা প্রয়োজন। একই সাথে কোরিয়া কানেক্ট সেন্টার স্থাপন করে আমদানিকারক-রপ্তানিকারক, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা হলে দুই দেশই উপকৃত হবে।
কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, দুইশর অধিক কোরিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশে সফলভাবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে কোরিয়ান পণ্য নিয়ে ‘শো-কেস কোরিয়া’ এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে কোরিয়ায় ‘শো-কেস বাংলাদেশ’ নামের প্রদর্শনী আয়োজনের কথা জানান তিনি।
কোরিয়া ট্রেড সেন্টারের ডিরেক্টর জেনারেল কিম ডং হাইঅন বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সাথে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করি।
চট্টগ্রাম কোরিয়ান কমিউনিটির সভাপতি জিন হিউক পাইক বলেন, চট্টগ্রামে ৫০টি কোরিয়ান কোম্পানি অত্যন্ত সফলতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে চিটাগাং চেম্বারের সহযোগিতা কামনা করে ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরো বেগবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জসিম উদ্দীন চৌধুরী, চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, কোরিয়ান ইপিজেডের সভাপতি জাহাঙ্গীর সাদত, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক শারমিন আক্তার, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার তোফায়েল আহমদ, বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহুসেইন, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ডা. মুনাল মাহবুব এবং উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি আবিদা মোস্তফা।
উপস্থিত ছিলেন চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, হাসনাত মো. আবু ওবাইদা, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, মো. ইফতেখার ফয়সাল, এস এম তাহসিন জোনায়েদ, তানভীর মোস্তফা চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিরুল আলম ফাহিম, কোরিয়ান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি লী জংগিউল, কেওইআইসিএর কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়ং আ দো, কোরিয়ান কমিউনিটি ইন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইয়ংগো ইউ, ফিলিপাইনের অনারারি কনসাল জেনারেল এম এ আউয়াল, চট্টগ্রামস্থ দক্ষিণ আফ্রিকার অনারারি কনসাল সোলায়মান শেঠ ও ইয়ংওয়ান গ্রুপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ শাহীনুর রহমান।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা সহজিকরণ, চট্টগ্রামে একটি কোরিয়ান হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে কোরিয়া গমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদান, দক্ষ জনবল সৃষ্টি করে কোরিয়াতে আমদানি করা, চট্টগ্রামে মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোরিয়ান একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ কর্মসূচি চালু করা, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও সামুদ্রিক অর্থনীতির সুবিধা আদায়ে একসাথে কাজ করা, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা প্রদান, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা, স্ক্র্যাপসহ অন্যান্য আমদানিতে ব্যয় হ্রাস করা, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়, খেলাধুলায় সহায়তা বৃদ্ধি, কৃত্রিম তন্তুর মাধ্যমে ফেব্রিঙ উৎপাদনে কারিগরি সহযোগিতা, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস, কোরিয়ান মেলা, কোরিয়ান ইন্টার্ন প্রেরণ, মহিলা উদ্যোক্তা তৈরিতে সহযোগিতা ও তরুণ প্রজন্মকে কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।












