টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারে পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। রপ্তানি কমলেও এ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে। আদা, রসুন, সুপারি আসছে। আসছে মিয়ানমারের রপ্তানি নিষিদ্ধ কাঠও। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে ৬২১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। কিন্তু বাণিজ্য কমলেও ডলারের বাড়তি দামে এ রেকর্ড রাজস্ব হয়েছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরের পণ্য আমদানি–রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস পর থেকে দেশে ডলার সংকট দেখা দেয়। টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঋণপত্র বা এলসি প্রথা চালু নেই। তাই এ দেশের ব্যবসায়ীরা ফরেন ডিমান্ড ড্রাফটের (এফডিডি) মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করেন। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক এই এফডিডি ইস্যু করে। ব্যাংক দুটি নির্ধারণ করে দিচ্ছে পণ্য আমদানির সুবিধা। সোনালী ব্যাংক আদা, রসুন ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আমদানির জন্য এফডিডি ইস্যু করছে না। অথচ এবি ব্যাংক বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী সব ধরনের পণ্য আমদানির জন্য এফডিডি ইস্যু করছে। এর মধ্যে গত ৩ আগস্ট থেকে এফডিডি ইস্যু বন্ধ রেখেছে এবি ব্যাংক। এবি ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মনজুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো এফডিডি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে সোনালী ব্যাংক টেকনাফ শাখা ও মিয়ানমার ইকোনমিক ব্যাংক মংডু শাখার সাথে সরাসরি বা অনলাইন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মঈনুল হাসান সৌরভ এ প্রসঙ্গে জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সম্পর্ক নেই মিয়ানমারের নির্ধারিত ব্যাংকের সাথে। তবে আমরা বিভিন্ন মারফত এফডিডি মংডুতে পাঠিয়ে থাকি।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২১–২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩ লাখ মার্কিন ডলারের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়। সদ্য সমাপ্ত ২০২২–২৩ অর্থবছরে সেই রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ডলারে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪১ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বন্দরের আমদানি তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২–২৩ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। ২০২১–২২ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। পরিমাণের দিক থেকে আমদানি কমলেও ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় টাকার অঙ্কে আমদানি অনেক বেড়েছে। আবার কিছু কিছু আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক–করও বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে এ বন্দরে। সর্বশেষ ২০২২–২৩ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৬২১ কোটি টাকা, যা এ বন্দরের ২৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা এ এস এম মোশারফ হোসেন বলেন, দেশের ডলার সংকটের মধ্যেও কাস্টমস শুল্ক কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনারের নির্দেশনায় টেকনাফ শুল্কস্টেশনের কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হয়েছে। তবে রপ্তানি কমে যাওয়ায় তা বাড়াতে আমরা ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করছি।