বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এমন বিধান বাতিল করা দরকার

| শুক্রবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

একথা আজ অস্বীকার করা যাবে না যে, দেশের অর্থনীতি প্রায় ভঙ্গুর। পত্রিকান্তরে অভিযোগে প্রকাশ, ‘গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো সরকারের ঘনিষ্ঠদের লুটপাটে তছনছ পুরো ব্যাংক খাত। ডলার সংকটে রিজার্ভ নেমে তলানিতে। পাহাড়সম বিদেশি ঋণ। রপ্তানিতে ভাটার টান। আস্থার সংকটে থাকা ব্যবসাবিনিয়োগে মন্দার প্রভাবে গতিহীন রাজস্ব আয়। ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামল শেষে রীতিমতো ফোকলা অর্থনীতি সামলানোর ভার পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। এর মধ্যে সুযোগ বুঝে দাবি আদায়ের মিছিলে শামিল বিভিন্ন স্তরের স্টেকহোল্ডার। আছে সংস্কার কর্মকাণ্ডের হাজারো চাহিদাও। এতসব চাপ নিয়েও নতুন সরকার যখন স্বাভাবিক কাজে ফেরা নিয়ে ব্যস্ত, তখনই দেশের একটি অংশের মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। ফলে অভ্যন্তরীণ আয় কম হলেও বিশাল খরচের ফর্দ সরকারের সামনে। তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনা করে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরো জানা যায়, দায়িত্ব নিয়েই এতসব সংকট ও চাহিদা পূরণের মুখে পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।’

আন্দোলন ও সরকার পতনের আগে ও পরের ধ্বংসযজ্ঞ, ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশহীন দিনগুলোতে নিরাপত্তাহীনতায় ব্যবসাবাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ায় অর্থবছরের শুরুটা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই ভালো হল না। আমদানিরপ্তানি থেকে শুরু করে উৎপাদন, পণ্য সরবরাহ, প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ ও রাজস্ব আহরণে ভাটা দেখা গিয়েছে; আরও ক্ষত বাড়ার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

এ অবস্থায় গত ৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে সংবাদ প্রকাশিত হয় : ‘রপ্তানি বাণিজ্যের পালে হাওয়া / চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে আগস্টে’। সংবাদটি আশাব্যঞ্জক। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও রপ্তানি বাণিজ্যের পালে হাওয়া লেগেছে। চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে সদ্য শেষ হওয়া আগস্টে। চলতি বছরের শেষ হওয়া আট মাসের মধ্যে আগস্টে অন্যান্য মাসের তুলনায় গড়ে দেড় গুণের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আলোচিত আগস্টে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এসেছে ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বিশ্বের নানা দেশে প্রেরিত রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারের ক্ষেত্রেও সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। আগস্টে ৭৮ হাজার ১৪৬ টিইইইএস কন্টেনার রপ্তানি পণ্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে; যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। অপরদিকে বছরজুড়ে আমদানি প্রায় স্থিতিশীল থাকায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে। চলছে ডলার সংকট। ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাসহ নানা প্রতিকূলতায় বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকটের মুখে। বিশ্বের পাশাপাশি দেশেও গত জুলাই এবং আগস্ট মাস চরম অস্থিরতার মধ্যে কেটেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও রপ্তানির পালে হাওয়া লাগায় স্বস্তি বিরাজ করছে রপ্তানিকারকদের মাঝে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে সামগ্রিক রপ্তানি আয় বার্ষিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯.৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক খাতে গত অর্থবছরের জুলাইআগস্টের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৭.৯৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭.১১ বিলিয়ন ডলার। গার্মেন্টস সেক্টরের রপ্তানি বৃদ্ধি স্বস্তির খবর বলে বিজিএমইএর নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন।

এ সংবাদ আনন্দের হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট ও বাণিজ্যে স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হলো ব্যাংকের তারল্য সংকট কমানো ও এলসি জটিলতা কাটানো ও বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এমন আইন ও বিধান বাতিল করা। তাঁরা বলেন, আমরা আমাদের দাবিগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। কোনো কিছু ওভার নাইট পরিবর্তন হয়ে যাবে না। আমাদের সকলকে সাহায্য করতে হবে। তবে আমরা আশাবাদী, দ্রুত সময়ে সংকট থেকে বেরিয়ে আসব।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, গণ আন্দোলনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। সরবরাহ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছিল। তবে এখনও অর্থবছরের ১০ মাস আছে। দ্রুত সব ঠিক হবে না, তবে আরেকটু সময় নিয়ে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। মধ্যমেয়াদে সংকট কাটাতে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল সেগুলো পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। বিশেষত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী রিভিজিট করতে হবে। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রিভিজিট করতে হবে।

যেহেতেু দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত হচ্ছে পণ্য রাপ্তানি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স। সেহেতু এই দুটি খাতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে