শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনে সম্মত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান। দুই নেতা প্রথমে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। পরে দুই দেশের প্রতিনিধিদল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসে। পরে দুই নেতার উপস্থিতিতে যুব উন্নয়ন, কৃষি, কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। খবর বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, প্রায় এক ঘণ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম। সেজন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যৌথ ফিজিবিলিটি স্টাডি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের এখন দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) যাওয়া উচিত।
দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে ১৬ কোটি ডলারের মতো। এর মধ্যে ১২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৪ কোটি ডলারের মতো।
প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কার বাজারে বাংলাদেশের অনেক পণ্যের উজ্জ্বল সম্ভবনার কথা বৈঠকে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরে বিনিয়োগ করেছে। আমরা শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং হাই টেক পার্কগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ধান চাষ, মিঠা পানির মাছ চাষসহ কৃষি ক্ষেত্রে দুই দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। উপকূল, অ্যাকোয়াকালচার, মেরিনকালচার, গভীর সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ আহরণ বিষয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনেরও আগ্রহ দেখান। পাশাপাশি সক্ষমতা অর্জন, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশি নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমানের ওষুধ আমদানি করে শ্রীলঙ্কা লাভবান হতে পারে। জরুরি সাড়াদান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিনিময় করার আগ্রহ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে নিয়মিত সাক্ষাৎ এবং বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপগুলো নিয়মিত হওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রীলঙ্কা সফরের আমন্ত্রণ জানান রাজাপাকসে। তিনি বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং ব্যবসার ক্ষেত্র বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি ব্লু ইকোনোমি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।