বাণিজ্যিকীকরণের উদ্যোগ বন্ধ হওয়ায় নগরবাসী আনন্দিত

জাতিসংঘ পার্ক

| সোমবার , ৮ জুলাই, ২০২৪ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

নগরীর জাতিসংঘ পার্ক প্রায় এক যুগ ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল। সেখানে এখন গড়ে তোলা হচ্ছে ‘সবুজ উদ্যান’। আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় গৃহীত প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হচ্ছে পাঁচলাইশে অবস্থিত পার্কটি। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে পার্কের দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর, প্রবেশপথ, হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে’সহ অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। গাছ ও ঘাস লাগানো, বসার জন্য বেঞ্চ নির্মাণসহ অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। যা টানা বৃষ্টি না হলে চলতি মাসেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর আগে পার্কটির বিশাল অংশজুড়ে সুইমিংপুল নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ৬ জুলাই প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ পার্ককে ঘিরে বাণিজ্যিকীকরণের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। যার অংশ হিসেবে ওই সময় পার্কটির একটি অংশে ‘কমিউনিটি সেন্টার ও গেস্ট হাউস’ নির্মাণে একটি ঠিকদারি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করে। এ বিষয়ে ২০১৬ সালের ১৬ মে দৈনিক আজাদীতে ‘জাতিসংঘ পার্কে কমিউনিটি সেন্টার, গেস্ট হাউস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে সবাই। শুরু হয় আন্দোলন। পার্কটির মালিকানা দাবি করে গণপূর্ত অধিদপ্তর কাজ বন্ধে নোটিশ দেয় চসিককে। উচ্চ আদালতে রিট করে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতি। এতে আটকে যায় চসিকের উদ্যোগ। পরবর্তীতে পার্কটির উন্নয়নে ২০১৭ সালে প্রকল্প নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। এতেও আপত্তি দেয় চসিক। শেষ পর্যন্ত গণপূর্তের প্রকল্পেই দৃষ্টিনন্দন পার্ক বা সবুজ উদ্যান হয়ে উঠছে জাতিসংঘ পার্ক। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্মাণ শেষে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রবেশ ফি নেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া পার্ক এলাকায় কোনো দোকানপাট বা বাণিজ্যিক কিছু থাকবে না। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সীমানা দেয়াল ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পার্কের মাঝখানে নির্মাণাধীন ফোয়ারার কাজও শেষের পথে। গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের (সার্কেল) নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান খান আজাদীকে বলেন, অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। টানা বৃষ্টি হওয়ায় কাজ করা যাচ্ছে না। ওয়াকওয়ে’র ফিনিশিং বাকি আছে। এছাড়া বসার জন্য কিছু বেঞ্চ স্থাপন এবং ঘাস লাগানোর কাজ বাকি আছে। চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই এসব শেষ হবে।

নানামুখী দূষণে বিপর্যস্ত নগর জীবনে মানুষের মানসিক ও দৈহিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার বিষয়টি বিশ্বস্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছপালায় ঘেরা তথা সবুজ এলাকাই এই সমস্যার কার্যকর সমাধান হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আর শহরাঞ্চলে সবুজ এলাকার উপস্থিতি নাগরিকদের আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বলে আমরা সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, নগর পরিবেশ ও নাগরিক সুযোগসুবিধার প্রতি যত্নবান হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের সবার গন্তব্য এখন নগর। আমরা সবাই চাই নগরে বসবাস করতে। নগরের আধুনিক নান্দনিকতার জন্যই হোক অথবা গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের অভাবেই হোকসবাই ধরে নিয়েছে নগরই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। এ জন্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে নগরের জনসংখ্যা, বাড়ছে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা। ২০০৮ সাল থেকে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নগরে বসবাস করে। এই হারে বাড়তে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ নগর জনসংখ্যার পরিমাণ হয়তো ৭০ শতাংশে পৌঁছবে। এই অধিক নগর জনসংখ্যার সিংহভাগ বসবাস করবে উন্নয়নশীল বিশ্বের নগরগুলোয়, যেগুলো এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত। অর্থাৎ নগরে আগুয়ান সমস্যাগুলো উন্নত বিশ্বের চেয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বেই প্রসার ঘটবে বেশি। এশিয়ার মধ্যে যে নগরগুলো লক্ষণীয়ভাবে সমস্যার মুখোমুখি হবে সেগুলো হলোঢাকা, কলকাতা, মুম্বাই, করাচি, ব্যাংকক, সাংহাই ও জাকার্তা।

এ কথা বলা বাহুল্য যে, ইটপাথরের শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে। ঘর থেকে বের হলেও সরু গলির দু’পাশে সারি সারি অট্টালিকার জন্য দিনেও মনে হয় রাতের আঁধার নামে। আকাশছোঁয়া বিল্ডিংয়ের কারণে সূর্যের আলো, রাতের মায়াবী চাঁদের স্নিগ্ধতা উপভোগ করার উপায় নেই। এ অবস্থায় জাতিসংঘ পার্ককে বাণিজ্যিকীকরণের উদ্যোগ বন্ধ হওয়ায় নগরবাসী সন্তোষ প্রকাশ করছেন। পাশাপাশি এটিকে সবুজ উদ্যানে পরিণত করার উদ্যোগকে অভিনন্দন জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে