বাড়ছে শীতজনিত রোগ

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ধারণ ক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী শিশু ও বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে

জাহেদুল কবির | সোমবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

শীতের তীব্রতা গত কয়েকদিন ধরে বেড়েছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে শীতজনিত রোগব্যাধি। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। এছাড়া বৃদ্ধরা কাশির সাথে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের নিয়মিত টিকাদান, স্বাস্থ্যকর জীবন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, এই তিনটি বিষয় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে শিশুর মাথায় হালকা টুপি এবং হাতেপায়ে মোজা পরাতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। কোনোভাবেই আগুনের ধোঁয়া জাতীয় কিছু দিয়ে শিশুর শরীরে উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করা যাবে না। ঘরের বাইরে গেলে বড়দের যে পরিমাণ শীতের কাপড় প্রয়োজন হয়, শিশুকেও যেন একই ধরনের কাপড় পরানো হয়। খুব বেশি যাতে পরানো না হয়। অন্যদিকে শীতের সময় বয়স্কদেরও বাড়তি যত্ন নিতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এর এক তৃতীয়াংশ আবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী। একইসাথে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়ছে চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালেও। অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার। চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীতের সময় কিছু কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া। তাই বয়স্ক লোকদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী বলেন, শীত বাড়ার কারণে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালগুলোতে সম্প্রতি শীতজনিত (রোটা ভাইরাস) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। যেহেতু এটা এক ধরনের ডায়রিয়া, তাই বিশুদ্ধ পানি পানের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী বাচ্চাদেরকে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খেতে দিতে হবে। পানিশূন্যতা প্রতিরোধে ডায়রিয়া রোগীকে প্রতিবার পাতলা পায়খানা ও বমির পর চামচ কেটে ওরস্যালাইন খেতে দিন। অপরদিকে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও অ্যাজমা আক্রান্ত হয়েও শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। আমাদের দেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। সাধারণত যেসব শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের নিউমোনিয়া বেশি হয়। এছাড়া প্রিম্যাচিউরড (সময়ের আগে জন্ম নেওয়া) শিশুদেরও নিউমোনিয়া বেশি হয়। ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিজনিত কারণেও নিউমোনিয়া হয়। এখন নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হলে গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে গর্ভকালীন মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া স্বল্প বিরতিতে সন্তান জন্ম দিলেও সেই সন্তানের ওজন কম হতে পারে। মাবাবা কেউ ধূমপায়ী হলে সন্তানের নিউমোনিয়া হতে পারে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস ছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশু নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সেঁজুতি সরকার আজাদীকে বলেন, শীত মৌসুমে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের হার বাড়ে। নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা পেতে অভিভাবকদের সচেতন হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা বেশি অসচেতন। তারা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের দিয়ে শিশুর চিকিৎসা করান অথবা একেবারেই করান না। যখন শিশুর অবস্থার অবনতি হয়, তখন হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে। তাই অভিভাবকদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরো ৫ ব্যাংকের এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটি
পরবর্তী নিবন্ধ১৯১১টি মামলার নথি উধাও, থানায় জিডি