নগরজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। পিছিয়ে নেই উপজেলায়। চলতি সেপ্টেম্বরে নগর ও উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১০৪ জন। এছাড়া মারা গেছেন ২ জন। চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত ৭০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে নগরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮৪ জন এবং উপজেলাগুলোতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩১৮ জন। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। উপজেলার মধ্যে আক্রান্ত সর্বোচ্চ ১৩১ জনই লোহাগাড়ার বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪ জন পুরুষ, ৪ নারী ও ৪ শিশু। গত জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয় ৬৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ জন, মার্চে ২৮ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে তে ১৭ জন, জুনে ৪১ জন এবং জুলাইয়ে ১৯৮ জন, আগস্টে ২০২ জন এবং সেপ্টেম্বরে গতকাল পর্যন্ত ১০৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া জানুয়ারিতে মারা গেছেন ২ জন, মার্চে ১ জন, জুলাইয়ে ১ জন, আগস্টে ১ জন এবং সেপ্টেম্বরে ২ জন মারা গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। অনেক রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষার (এনএসওয়ান) রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এটির আসলে কোনো দরকার নেই। ডেঙ্গুর প্ল্যাটিলাট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন কেবল রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। তখন জরুরি চিকিৎসা কিংবা নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে রক্তের প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান, চলতি মাসে নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়া শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাস আগে নগরের চেয়ে উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি ছিল। এরমধ্যে বেশিরভাগই ছিল লোহাগাড়ার বাসিন্দা। কিছুদিন আগে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখন আবার সাম্প্রতিক সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টি ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা প্রজননে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই সবাইকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখাসহ কোথাও যাতে তিনদিনের বেশি পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিস মশার বংশ বিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে। বিশেষ করে আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ আঙিনা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে। এটি সবার দায়িত্ব।
উল্লেখ্য, গত বছর নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন। এরমধ্যে মারা যায় ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন, ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২২১ জন এবং মারা যায় ৫ রোগী।