বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে

| রবিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যের মূল্য। অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষজনের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কারও ন্যূনতম কোনো দায়িত্ব নেই। যার কারণে বাজারে এক লাফে জিনিসের দাম দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, গত সপ্তাহের থেকে চলতি সপ্তাহে জিনিসের দাম দ্বিগুণ। ক্রেতারা বলেন, ‘পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, চিনি, ময়দা, মসুর ডালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। যাদের মজুদ ছিল তারাই লাভবান হয়েছে। আর যাদের মজুদ ছিল না তাদের বেশি দামে কিনে, বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার বাড়তি খরচের চাপ থেকে মানুষ বের হতে পারছে না। বাজার অসহনীয় হয়ে উঠছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, ডিম, মাছ, মাংসের মতো পণ্যের দাম আগে থেকেই চড়া। এরপর ভরা মৌসুমেও শাকসবজির দাম নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। শুধু কাঁচাবাজারই কেন, পোশাক-পরিচ্ছদ, টয়লেট্রিজ ও গৃহস্থালি পণ্য, ওষুধপত্র, নির্মাণসামগ্রী, রান্নার গ্যাসসহ প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। মানুষের যাতায়াত খরচও বেড়েছে আগের তুলনায়। সামগ্রিকভাবে বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই এখন চাহিদার তুলনায় কম বাজার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে পুষ্টি সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাজার বিশ্নেষকরা বলছেন, কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক ধরনের শিল্প ও ভোগ্যপণ্যের কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্যের দাম বেড়েছে। আবার বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম ও পরিবহন খরচ। করোনার ধাক্কা সামলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে সারাবিশ্বেই ভোগ্য ও শিল্পপণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ করে সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে দাম বেড়েছে। এ ছাড়া আরেকটি কারণ হলো, জাহাজসহ অন্যান্য পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি। জাহাজ ভাড়া যেমন বেড়েছে, তেমনি পণ্য সরবরাহে বেশি সময়ও লেগেছে। তবে এসব কারণে যতটুকু বাড়া উচিত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি বাড়ছে। এর মানে ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। আবার কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই। যেমন ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে। কোনো সবজিই এখন স্বাভাবিক দামে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পৌষ, মাঘ মাসে শীতকালীন সবজির দাম কম থাকে। অন্যদিকে এ সময় খালবিল, ঘের শুকিয়ে আসায় মাছের সরবরাহ বেড়ে দামও কমে যায়। এ বছর সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না। কয়েকবার বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। এখন আবার বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে প্রায় সব নিত্যপণ্যই কমবেশি উৎপাদিত হয়, যদিও এর পরিমাণ চাহিদার তুলনায় কম। এ অবস্থায় সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো নিত্যপণ্য আমদানি করা হলে বাজারে কোনো পণ্যের বড় ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা থাকে না। পেঁয়াজ নিয়ে এত আলোচনার পর এখনো এ পণ্যের জন্য আমদানির ওপর নির্ভরতার বিষয়টি দুঃখজনক।
সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করাও সম্ভব হতে পারে। বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তির উৎস খুঁজে বের করে তা ধ্বংস করতে হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো কতটা স্থায়ী সুফল বয়ে আনবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত ডিসেম্বর মাসে মজুরির হার বেড়েছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। আর মূল্যম্ফীতি বেড়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতি এখন প্রতি মাসেই বাড়ছে। ফলে শ্রমজীবী মানুষের বাড়তি আয় খেয়ে ফেলছে জিনিসপত্রের দাম। করোনার কারণে কাজ হারিয়ে যারা ঋণগ্রস্ত, তাদের অনেকেই বাড়তি আয় করেও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা নানা রকম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে, সেদিকে তাকিয়ে আছে মানুষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে