বাজার মনিটরিং বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

রতন কুমার তুরী | মঙ্গলবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যের মূল্যসমূহ। এ দ্রব্যমূল্য সমূহ বাড়ার বন্যাসহ বেশকিছু কারণ থাকলেও এভাবে দফায় দফায় দ্রব্যসমূহের মূল্য বাড়ার কথা নয়। তারপরও কেনো এমন হচ্ছে এ বিষয়টি তলিয়ে দেখা জরুরি।

বর্তমানে সম্পূর্ণ নতুন একটা অরাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এখনই সঠিক সময় বাজারে দ্রব্যসমূহের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার। নিকট অতীতে চাঁদাবাজি আর বাজার সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দ্রব্যসমূহের মূল্য বাড়তে আমরা লক্ষ্য করেছি। এ বিষয়ে অসংখ্য বাজার বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত মিডিয়ায় দিয়েছেন এবং পত্রপত্রিকায় লিখেছেন। এর বাইরে দেশের কোটি মানুষ সবসময় এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ জানিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং বাজারে দ্রব্যসমূহের মূল্য কোনো কারণ ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এখন বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার সময় এসেছে। মাঠ, গুদাম, পাইকার, আড়তদার, খুচরা বিক্রেতা সবাইকে এক সূতোয় আনতে হবে যাতে বাজারের মূল্যনিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়। এখন মাঠ কিংবা প্রক্রিয়াজাত পর্যায়ে দ্রব্যের মূল্য আর বাজারে দ্রব্যের মূল্যের সাথে ব্যবধান রয়ে যাচ্ছে খুববেশি। এমনটি কী কারণে হচ্ছে সেটি খুঁজে বের করা উচিত। কোথায় এখানে মধ্যস্বত্বভোগীরা পণ্যের মূল্যের ফারাক ঘটাচ্ছে তা খুঁজে বের করতে পারলে বাজারে দ্রব্যসমূহের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা তেমন একটা কঠিন কাজ হবে না।

বাজার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে দ্রব্যসমূহের বাজার দাম বেঁধে দেয়া এবং এ দামে বিক্রেতারা দ্রব্যসমূহ বিক্রি করছে কী না তা নিরলসভাবে মনিটরিং করা। মনিটরিং বিষয়টি এমন একটি ব্যাপার এটি সবসময় না করলে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের নিকট থেকে ইচ্ছেমত দাম নেবেই। আমাদের ব্যবসায়ীরা কোনো দিনই ক্রেতাবান্ধব ছিলো না বর্তমানেও থাকবে না। এরা সুযোগ পেলেই দাম বাড়াবে। সুতরাং নিয়মিত বাজার মনিটরিং বিষয়টিকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতেই হবে। তবে একটা বিষয় ঠিক যে, যেহেতু বিভিন্ন দ্রব্য বাজারে আনতে পথেঘাটে তেমন একটা ঝামেলা নেই সে হিসেবে চাইলে ব্যবসায়ীরা বাজারে পণ্য সামগ্রীর দাম ক্রেতা সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে পারে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এবিষয়ে বর্তমান সরকার চাইলে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারে। কারণ তাদের সময়ও দেশে ব্যবসায়ীরা যখন তখন দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বাড়িয়ে জনসাধারণকে ভোগান্তিতে ফেলতে পারে। এর জন্য আগেভাগে সাবধান হতে হবে। কোনো কারণেই ব্যবসায়ীরা যাথে অকারণে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়িয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে না পারে এবিষয়ে তাদেরকেই উদ্যোগী হয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে। বাজারে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়লে মূলত কী কারণে বেড়েছে এবং কতটুকু বেড়েছে তার গ্রহণযোগ্য যুক্তি থাকতে হবে একেবারে ডকুমেন্টসসহ। তা না হলে বাজারে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হবে না। ওমুক দেশে বেড়েছে বলে দাম বেড়েছে, দ্রব্যের সরবরাহ কম অথচ ইচ্ছে করে দ্রব্যের দাম বাড়ানোর জন্য সব দ্রব্য গোডাউন ভর্তি করে রেখেছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। দ্রব্যমূল্য বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মনগড়া যুক্তির বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বাজারে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণগুলো হলো বাজার সিন্ডিকেট, অসাধু আড়তদার, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, পণ্যপরিবহনে চাঁদাবাজি ইত্যাদি। এসব বিষয়ে সবসময় নজর রাখতে পারলে বাজারে দ্রব্যমৃল্য অনেকটাই ক্রেতা সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে থাকবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যদি সবসময় অধিক মুনাফা করার প্রবল ইচ্ছা জাগ্রত থাকে তাহলে বাজারে পণ্যের দাম কোনো অবস্থাতেই কমানো সম্ভব হবে না। মূলত সবসময় সবকিছুতে মানুষকে আইন দিয়ে পরিশুদ্ধ করা যায় না। একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের দুঃখ কষ্ট বুঝা আমাদের প্রত্যেকের মানসিকতার মধ্যে থাকা উচিত। তাহলেই শুধু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নয় পুরো সমাজকেই পাল্টে দেয়া যাবে। বর্তমানে পরিবর্তিত সময়ে শুধু বিভিন্ন সংষ্কার নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না দেশের সাধারণ মানুষের কথাও সরকারকে চিন্তা করতে হবে। এ মুহূর্তে টিসিবির দ্রব্যসমূহ বাজারে বিক্রির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। টিসিবির দ্রব্যসমূহ দিয়ে দেশের শ্রমজীবী অনেক মানুষরই জীবন চলে। টিসিবির দ্রব্যসমূহ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে তাই বাণিজ্য উপদেষ্টা যাতে বিষয়টি দেখেন। প্রকৃতপক্ষে দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে বাস্তবমুখী কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। হঠাৎ একদিন এসে বাজারে ঢুকে কয়েকজনকে জরিমানা করে দিয়ে চলে গেলে হবে না। এখানে মনিটরিং হতে হবে দীর্ঘমেয়াদী এবং পরিকল্পনা মাফিক। মূল্যনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া চলবে না। যে কোটি টাকার ব্যবসা করে তাকে অনিয়মের জন্য যে শাস্তি দেয়া হবে খুচরা পর্যায়েও ঠিক একই রকম শাস্তির বিধান রাখতে হবে। বিশেষ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সিন্ডিকেটের হোতাদের চিহ্নিত করতে হবে কারণ তারাই শতকোটি টাকার জিনিস বাজার থেকে কিনে নিয়ে গোডাউনে রেখে দিয়ে বাজারকে অস্থির করে তোলে। আমরা প্রত্যাশা করবো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনগণের দুর্ভোগ লাগব করবেন।

লেখক: কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাথমিক বিদ্যালয়- শিক্ষা এবং শিক্ষক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রান্তিক মানুষের কষ্ট লাঘবে পদক্ষেপ নিন