বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু চট্টগ্রামে মতবিনিময় সভায় ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ মার্চ থেকে আসছে নতুন বাজার ব্যবস্থাপনা। বিশেষ সভা করে ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।জেলা প্রশাসন আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী সপ্তাহে আমরা ট্যারিফ কমিশনের সভা করব। সেখানে ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। ভোক্তা এবং ব্যবসায়ী সবার কাছে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আমরা দেখি প্রতিমন্ত্রী আগামী এক মাস মজুদসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি হয় এমন সব কিছু থেকে ব্যবসায়ীদের বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যে বড় আমদানিকারকদের সাথে বৈঠক করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। বাজার মনিটরিং নিয়মিত চলবে। শুধু রমজান কেন্দ্রিক রাখতে চাই না। সব সময় যেন বাজার স্থিতিশীল থাকে সেই অনুযায়ী কাজ করব। সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কৃষি বিপণনসহ বাজার রিলেটেড অনেকগুলো আইন রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন তেমন নেই। এসবও দেখব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকট নেই। এবার ১৩ লাখ ৫০ হাজার টন খাদ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ৩ লাখ টন বেশি। ১৮ লাখ টন খাদ্য শস্য রয়েছে। আরো আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাজারে আসলে কিছু সমস্যা রয়েছে। স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। কাজ করতে হবে। সেটি সবাইকে নিয়েই করতে চাই। এক শতাংশ ব্যবসায়ী বাজার অস্থিতিশীল করে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা ভোক্তার পাশে থাকবে, আমরাও তাদের পাশে থাকব। ভোগান্তি সৃষ্টিকারীরের সাথে আমরা নেই।
অন্যদিকে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, পুলিশ–ভোক্তা অধিদপ্তর দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে। কমানো বা বাড়ানো দুটোই বাজারের জন্য ক্ষতিকারক। আজ কিছু পণ্যের দাম কমিয়ে দিলে কৃষক আর ফসল ফলাবে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে এটাই বাস্তবতা। এখন মানুষ চিন্তা করে মাছ কিনবে নাকি মুরগি কিনবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু অনেক ধরনের পণ্য আমদানি করে থাকে, বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি আমাদের এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির একটি কারণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশের ভোক্তারা এর সুবিধা পাচ্ছে না।
বর্তমানে বাজারে দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে, ডলারের দাম বেড়েছে। আবার ডলার–সংকটও হয়েছে। সব মিলিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই। কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হবে।
তাঁরা বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের স্বার্থ দেখতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, গ্যাস, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজসহ সব ধরনের মসলার দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজেট যেন ধনীকে আরও ধনী এবং গরিবকে আরও গরিব না করে। সবার মধ্যে মোটামুটি ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সরকার প্রায় এক মাস ধরে বাজার নিয়ন্ত্রণ বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেসব তৎপরতা বা অভিযান বাজারকে প্রভাবিত করতে পারছে বলে এখনো অনুভূত হয়নি। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে মন্ত্রী– প্রতিমন্ত্রীরা সর্বদাই তাদের নিজ নিজ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। কিন্তু মূল্য পরিস্থিতি ভোক্তার কাঙ্ক্ষিত নাগালের কাছে–মধ্যেই আসছে না! ভরা মৌসুমের মধ্যে একদিকে চালের ঊর্ধ্বমূল্য, অন্যদিকে শীতকালীন শাক–সবজির ভালো উৎপাদনের মধ্যে এসবের মূল্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতাকে সদম্ভে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে! এ অবস্থার মধ্যে আসন্ন রমজান মাসের সম্ভাব্য সংকটের কথা চিন্তা করে সাধারণের মধ্যে দিশাহারা মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর সরকার ৫ শতাংশ রাজস্ব কর হ্রাস করেছে। এতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে সাময়িকভাবে আমরা কিছুটা স্বস্তি লাভ করেছি। কিন্তু আমাদের এ স্বস্তি শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নানা ছলাকলা ও কারসাজির কারণে অস্বস্তিতে পরিণত হয় কিনা রমজান মাস এলেই তা পরিষ্কার বুঝতে পারব।
অসাধু ব্যবসায়ীদের কথিত সিন্ডিকেট কর্তৃক দ্রব্যমূল্যের অনিয়ন্ত্রিত চক্রপ্রবাহের মধ্যে পড়ে সাধারণের স্বস্তিও দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে! ভরসা একটাই, এবার অন্তত সরকার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বিগ্ন তা নিজেই স্পষ্ট করেছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, আসন্ন রমজান আমাদের সামনে বাজারকে তীব্র রকমের অস্বস্তিকর করে তুলবে বলে সবার আশঙ্কা। এরই মধ্যে ছোলা ও খেজুরজাতীয় খাদ্যপণ্যের ওপর রমজানের আবহ শুরু হয়ে গেছে! বিভিন্ন খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর সরকার কর হ্রাস করলেও ডলারের মূল্যের অজুহাতে সেসব পণ্যের মূল্যহ্রাস তো দূরের কথা স্থিতিশীলই থাকছে না। বরং রমজানের সময় যেসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা তার দাম আগেই সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে সাধারণের মধ্যে কেবল অস্বস্তি নয়, সীমাহীন আতঙ্কও ঘুরপাক খাচ্ছে! এ জন্য নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।